রোহিঙ্গাদের দেখতে ভাসানচরে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল

কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে এরই মধ্যে চার দফায় ১৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর ভাসানচরের পরিবেশ-পরিস্থিতি ও স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা কেমন, এই প্রথম তা সরেজমিনে দেখতে গেল জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল।

জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে দুপুর নাগাদ ভাসানচরে পৌঁছায়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার কাজে যুক্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এই দলে রয়েছেন।

আজ দুপুরের দিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের ভাসানচরে যাওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছেন। জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধিদল এই প্রথম দ্বীপটি সফর করছে। তার আগে গত মাসে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচরে গিয়েছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলটি ভাসানচরে তিন দিন থাকবে। এ সময় তারা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা ঘুরে ঘুরে দেখবে। তারা রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনের বিষয়ে খোঁজখবর নেবে। একই সঙ্গে সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবে।

ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছে সরকার

ভাসানচরে প্রতিনিধিদলের সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘ আজ দুপুরে ই-মেইলে প্রথম আলোকে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের আয়োজনে ১৭ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচর পরিদর্শন করবে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় কর্মরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা তিন দিনের এই প্রাথমিক পরিদর্শনে যুক্ত থাকছেন। এই পরিদর্শনের মাধ্যমে ভাসানচরের বর্তমান সুযোগ-সুবিধা ও পরিস্থিতি দেখা হবে। স্থানান্তরিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাহিদা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হবে। সরকারি কর্তৃপক্ষ ও ভাসানচরে কর্মরত অন্যান্য সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে পাঁচ দফায় ১৩ হাজার ৭৬০ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফা, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা, চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফা, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফা, ৩ ও ৪ মার্চ পঞ্চম দফায় ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা হয়েছে।

শুরু থেকেই বাংলাদেশের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর করছে। তবে সরকার বলছে, যেসব রোহিঙ্গা যাচ্ছে, তারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তার আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।