পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রত্যাবাসনে যারা বিরোধিতা করছে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি তাঁর দপ্তরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি এ ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশে এত আরাম-আয়েশে রোহিঙ্গারা আছে, তারা কি সহজে ফিরে যেতে চাইবে, এ প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত আরাম থাকবে না। এখন তো অনেকে সাহায্য দেয়। অনেক দিন থাকলে ..আমরা প্রায় আড়াই তিন হাজার কোটি টাকা নিজেদের তহবিল থেকে খরচ করছি। ভবিষ্যতে সেই টাকা অত থাকবে না। তখন সমস্যা হবে। যারা যেতে চাচ্ছেন না তাদের নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য তাদের যে ফিরে যাওয়া দরকার এটা তাদের ভাবা উচিত।’
এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আজকে তো আশা করেছিলাম প্রত্যাবাসনটা শুরু হবে। স্বল্প আকারে হলেও শুরু হবে। তবে এখনো শুরু হয়নি। আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। তবে এ সমস্যাটা তৈরি করেছে মিয়ানমার। সমস্যার সমাধানও তাদের ওপরে। আমরা জোর করে কিছু করতে চাই না।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার জন্য রাখাইনের পরিবেশ নিয়ে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর আস্থার অভাবকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত দুই দেশের যৌথ কমিশনের চতুর্থ বৈঠকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা মাঝিদের মধ্যে শ’খানেককে রাখাইনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের রাখাইনে নিয়ে মিয়ানমার দেখাক প্রত্যাবাসনের জন্য তারা কি আয়োজন করেছে। কারণ রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা হচ্ছে, সেখানকার নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়। কাজেই মিয়ানমার ওদের নিয়ে গিয়ে দেখাক, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তুত। বাংলাদেশের কোথাও কোনো গাফিলতি নেই।
রাখাইনে ফিরে যাওয়ার আগে নাগরিকত্বসহ পাঁচ দফার শর্ত জুড়ে দিয়েছে রোহিঙ্গারা। এসব দাবি পূরণের আগে তাদের রাখাইনে পাঠানো ঠিক হবে কি না জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা তো তাদের দাবির কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারি না। তাদের দাবি নিজের দেশে গিয়েই অর্জন করতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে না যাওয়ার ব্যাপারে যারা প্ররোচনা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমরা নেব। যারা না যাওয়ার জন্য লিফলেট দিচ্ছে, প্রচারণা চালাচ্ছে আমরা তাদের চিহ্নিত করছি। এবং অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বলছে যাওয়া ঠিক হবে না, ইংরেজিতে তাদের দাবি লিখে দিচ্ছে অবশ্যই আমরা তাদের চিহ্নিত করব।’
দুই দফায় প্রত্যাবাসনের চেষ্টা তো ব্যর্থ হলো। এটাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি এটাকে দুঃখজনক বলি। পরবর্তীতে আমরা চিন্তাভাবনা করব কীভাবে তাদের পাঠানো যায়।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার উল্লেখ করে আবদুল মোমেন বলেন, কালকেও চেষ্টা করব। আমাদের আজকে থেকে প্রক্রিয়া শুরুর কথা। প্রক্রিয়াটা অনেক দিন ধরে চলার কথা। একদিনে তো পাঠাতে পারবেন না। প্রক্রিয়া আমরা আজ শুরু করতে চাচ্ছিলাম ।এখনো আমরা চারটা পর্যন্ত চেষ্টা করব। এরপর দেখি কি হয়।
এত উদার হয়ে বাংলাদেশ ভুল করেছে মনে হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটার ভালো-মন্দ দুই দিকই আছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাদের কথা রাখবে। আগে কিন্তু তারা কথা রেখেছিল। ’৭৮ সালে ও ’৯২ সালে তারা তো রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়েছিল।