প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ তাঁকে হেনস্তা ও হয়রানির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। এ ছাড়া সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তাঁরা এসব দাবি জানান। বেলা ১১টার কিছু আগে সমাবেশ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সোয়া দুইটার দিকে।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রোজিনা ইসলাম সত্য প্রকাশ, অবাধ তথ্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক ও সংগ্রামী। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতীক তিনি। রোজিনা ইসলাম যে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, সেটি তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, সেটি জনগণের তথ্য। তাই চৌর্যবৃত্তির যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, সেটি বা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট জনগণের অবাধ তথ্য পাওয়ার অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, দেশের সাংবাদিকতায় একটা ক্রান্তিকাল চলছে।
রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সমালোচনা করেছেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের নেতৃত্বে কোনো কমিটি আমরা চাই না। সবচেয়ে বড় কষ্ট, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে ধরনের নির্যাতন হয়েছে, তা সভ্য দেশে হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এভাবে কোনো সাংবাদিককে আটকে রাখতে পারে না। একটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করতে হবে, যেখানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিরা থাকবেন, কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেউ থাকবেন না।
রোজিনা ইসলামকে দোষী করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমগুলোর সমালোচনা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, পত্রিকার মালিকেরা সামান্য একটা বিজ্ঞাপনের লোভ সামলাতে পারলেন না। তিনি বলেন, রোজিনা ইসলাম সৎ, সাহসী ও পরিশ্রমী সাংবাদিক। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, তা গুপ্তচরবৃত্তির। গুপ্তচরবৃত্তি আর সাংবাদিকতা এক নয়। যে আইনে মামলাটি করা হয়েছে, আইনটি মৃত। সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংবাদিকেরা মনে করেন, রোজিনার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এভাবে কোনো সাংবাদিককে আটকে রাখতে পারে না। একটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করতে হবে, যেখানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিরা থাকবেন, কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেউ থাকবেন না।ফরিদা ইয়াসমিন, সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীন, নিরপেক্ষ একটা কমিটি করে এ ঘটনার তদন্ত করতে হবে। আর তদন্ত কমিটি গঠিত হতে হবে প্রশাসনমুক্ত।
সমাবেশে আরও অংশ নেওয়া সাংবাদিক সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক পরিষদ, বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ আন্তধর্মীয় লেখক ও সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সাংবাদিক জোট, ঢাকা বিভাগ সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, লালমনিরহাট সাংবাদিক ফোরাম, শরীয়তপুর সাংবাদিক সমিতি।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের বাইরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের নেতারা রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
এ ছাড়া রোজিনা ইসলামকে শর্তহীনভাবে মুক্তির দাবিতে সকালে প্রেসক্লাবের বাইরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, জাতীয় নারী জোট, জাতীয় শ্রমিক জোট, জাতীয় যুব জোট।