টেকনাফে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে র্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর নিকটস্থ দুই রোহিঙ্গা শিবিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকালও পাহাড়ে গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন শিবিরের বাসিন্দারা।
এদিকে ওই কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাতজনের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চারজনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল, তাঁদের লাশ দাফনের জন্য গতকাল সন্ধ্যায় স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। বাকিদের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আজ বুধবার পর্যন্ত যদি লাশ নেওয়ার জন্য কেউ না আসে, বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে সেগুলো দাফন করা হবে।
গত রোববার দিবাগত রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জাদিমোরা পাহাড়ে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাতজন নিহত হয়। র্যাব বলেছে, নিহত ব্যক্তিরা সবাই রোহিঙ্গা এবং ডাকাত দলের সদস্য। রোহিঙ্গা ডাকাত দল জকির বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে তাদের সঙ্গে এই বন্দুকযুদ্ধ হয়। সেখান থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি ওয়ান শুটারগান, ১২টি পিস্তলের গুলি ও ১৩টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে এই ঘটনায় হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতির আইনে টেকনাফ মডেল থানায় তিনটি মামলা করেছে র্যাব। র্যাব-১৫–এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট (বিএন) মির্জা শাহেদ মাহাতাব প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা ডাকাতদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলসংলগ্ন দুই রোহিঙ্গা শিবির জাদিমোরা ও শালবাগানে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কের মধ্যে আছে। অপরিচিত কাউকে দেখলে শিবিরের বাসিন্দারা সহজে কথা বলতে চান না। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর এবং তাঁদের পরিচয় প্রকাশ
করা হবে না—এই আশ্বাস দেওয়ার পর কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা ও শিবিরের বাসিন্দা কথা বলতে রাজি হন। তাঁদের ভাষ্য, ডাকাত দলের বিষয়ে কোনো তথ্য দিলে তাঁদের ওপর পরে প্রতিশোধমূলক হামলা হয় কি না, এই ভয়ে আছেন। কারণ, শিবিরে ডাকাত দলের তথ্যদাতা (সোর্স) হিসেবে কিছু লোক কাজ করে। আবার, নিহতদের কাউকে চিনলে বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে কথা বললে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডাকাত দলের সহযোগী মনে করে ধরে নেয় কি না, সে ভয়ও আছে।
এর মধ্যে জকির ডাকাত পরিচয় দিয়ে গতকাল স্থানীয় এক শ্রমিকনেতাকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গারা জানান, শিবিরসংলগ্ন গহিন পাহাড়ে গতকাল দুপুরেও কিছু গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর আতঙ্ক আরও বাড়ে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আতঙ্ক আছে, আবার স্বস্তিও আছে। কারণ, ডাকাত দলের অত্যাচারে রোহিঙ্গারা অতিষ্ঠ। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসারের সমন্বয়ে ওই এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।