ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি সেতু খুলে দেওয়ায় সড়কপথেই এখন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় বন্দর নগর চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। এ কারণে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যাত্রীদের চাপ অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেশির ভাগ ঘরমুখী মানুষ সড়কপথে ভ্রমণ করছেন।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ তেমন ছিল না। প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনে আসনের বাইরে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা কম দেখা গেছে।
যাত্রীদের চাপ কমে যাওয়ার কারণ খুঁজছিলেন রেলওয়ের কর্মীরা। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সড়কপথে একটি যাত্রীবাহী বাস ট্রেনের চেয়ে কম সময়ে রাজধানী পৌঁছে যাচ্ছে। এ জন্য অনেকে বাসে চড়ে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন।
রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. আনসার আলী প্রথম আলোকে বলেন, অন্য বছরের ঈদের তুলনায় এবার স্টেশনে যাত্রীর চাপ কমে গেছে। কারণ, অনেক যাত্রী ট্রেনের পরিবর্তে বাস চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই বাস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে ট্রেনের ওপর।
আনসার আলী আরও বলেন, ‘সোমবার (আজ) স্টেশনে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫ মে খুলে দেওয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু। দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুটিও খুলে দেওয়া হয়। তিনটি সেতুর দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। অথচ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের এই পথে তীব্র যানজটের কারণে কতক্ষণে পাড়ি দিতে পারবেন, তা নিয়ে চিন্তায় থাকতেন যাত্রীরা। এসবই এখন অতীত। কারণ, এই পথ এখন পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ মিনিটে!
>ঈদে বাড়ি ফেরা
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি সেতু খুলে দেওয়ায় সময় কমেছে
যাত্রীদের যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে
গতকাল সকালে দামপাড়া বাস কাউন্টারে কথা হয় আসিফ সিরাজ নামের ঢাকাগামী এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি গ্রিন লাইন চড়ে রওনা হন। বাসে ওঠার আগে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বাস কাউন্টারে এসেছি। ট্রেনের আগে নাকি বাস ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। আমার বন্ধুদের পরামর্শে বাসে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ঈদের যাত্রায় গন্তব্যে পৌঁছাতে একটি বাসের পাঁচ ঘণ্টার বেশি লাগছে না। অথচ গত কোরবানি ঈদের সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছতে ১৮–১৯ ঘণ্টা লেগেছিল। কিন্তু তিনটি সেতু উদ্বোধনের সুফল এখন যাত্রীরা পাচ্ছেন।
দামপাড়ায় গ্রিন লাইন কাউন্টারের বিক্রয় প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গাড়ি এখন সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। একটি গাড়ি দুই পালায় যাত্রী পরিবহন করছে, যা গত কোরবানি ঈদে সর্বোচ্চ একপালায় পরিবহন করতে পেরেছিল। অর্থাৎ, এখন দুই পালা চলাচলের কারণে একটি বাস দিয়ে গত কোরবানি ঈদের তুলনায় দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম কদমতলী বাস টার্মিনালে গতকাল ঘরমুখী মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো ছিল না। অনেকগুলো বাস খালি দেখা গেছে। যাত্রী ভরে যাওয়ার পর একেকটি করে বাস বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা যায়। কদমতলী টার্মিনাল থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে।
কদমতলী টার্মিনালে নোয়াখালীর সোনাপুরগামী বাসের যাত্রী রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে লোকজন বাড়ি যাওয়া শুরু করেছে। এ জন্য হয়তো যাত্রীদের উপস্থিতি কম।