রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি সই হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এই চুক্তি সই হবে। এ জন্য বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল গত বৃহস্পতিবার মস্কো গেছে।
১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার (১ লাখ কোটি টাকারও বেশি) ব্যয়সাপেক্ষ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়া ৯০ শতাংশ, অর্থাৎ ১ হাজার ১৩৮ দশমিক ৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে। প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে রাশিয়া।
এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রকল্পের মূল চুক্তি (জেনারেল কন্ট্রাক্ট) সই হয়। গত ১৭ মে রাশিয়ার মস্কোতে দুই পক্ষ চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করে। সরকার অনুস্বাক্ষরিত সেই চুক্তি অনুমোদন করে গত ২৭ জুন। ১৮ জুলাই অনুমোদন করেছে রাশিয়ার সরকার। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত হওয়া ঋণ চুক্তি সইয়ের ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন আরও এক ধাপ অগ্রসর হলো।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলে আসছে, এই প্রকল্পে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে তিন টাকা। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী ও দেশি-বিদেশি পরমাণু গবেষকদের মতে তা আরও বেশি হবে।
প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর হিসাব অনুযায়ী রূপপুরের দুটি ইউনিট স্থাপনে ব্যয় হওয়ার কথা ৯৬০ কোটি (৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন) ডলার। রূপপুর প্রকল্পের জন্য পানির টাওয়ার করতে হচ্ছে, মাটি নিম্নমানের হওয়ায় ভূমিকম্প প্রতিরোধে বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। এসব কারণে হয়তো আরও কিছু বেশি ব্যয় হতে পারে। কিন্তু ১২৬৫ কোটি এবং এর সঙ্গে সমীক্ষা পর্যায়ের ব্যয় ৫৫ কোটি ডলারও যুক্ত হবে। অর্থাৎ মোট ব্যয় হচ্ছে ১৩২০ কোটি ডলার। এটা খুব বেশি মনে হচ্ছে।
রাশিয়ার দেওয়া ঋণের সুদাসল প্রথম ১০ বছর পরিশোধ করতে হবে না (গ্রেস পিরিয়ড)। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা শুরু হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। প্রতিবছর দুটি করে কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
রূপপুর কেন্দ্রে দুটি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয়টি পরের বছর চালু হতে পারে। অবশ্য সরকার চায় স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীর বছর, ২০২১ সালে প্রথম ইউনিটটি চালু হোক।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৬১ সালে, পাকিস্তান আমলে। কিন্তু তারপর প্রায় ৫০ বছর এ বিষয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ২০০৯ সালে এই কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে এ-সংক্রান্ত একটি আইন পাস করে। ২০১১ সালের নভেম্বরে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি সই করে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রটি স্থাপনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।