কামাল হাওলাদার বলেন, এখন আকারে ছোট মাছ কিনি। এতে বেশি পিস হয়। আগে প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০টি কই মাছ পাওয়া যেত। এখন এমন আকারের কই কিনি, যাতে কেজিতে ১২ থেকে ১৫টি পাওয়া যায়।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার হুমায়রা খাবার ঘরে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতিটি রুটি ও পরোটা বিক্রি হতো ৫ টাকায়। সেটা এখন ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে এক বাটি ডালভাজির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ১৫ টাকা।
হোটেলটির মালিক কামাল হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে দাম বাড়াইনি। এবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।’ তবে দাম বাড়িয়ে রুটি ও পরোটার আকার কিছুটা বড় করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া অন্য খাবারের দাম না বাড়িয়ে বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছেন জানিয়ে কামাল হাওলাদার বলেন, ‘এখন আকারে ছোট মাছ কিনি। এতে বেশি পিস হয়। আগে প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০টি কই মাছ পাওয়া যেত। এখন এমন আকারের কই কিনি, যাতে কেজিতে ১২ থেকে ১৫টি পাওয়া যায়।’
গতকাল সোমবার তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশান, বাড্ডা, আফতাবনগর ও ফার্মগেট এলাকার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় যান এই প্রতিবেদক। এর মধ্যে কোনো কোনো মালিক খাবারের দাম আগের চেয়ে কিছুটা বাড়িয়েছেন। তবে কেউ আবার দামে পরিবর্তন না এনে পরিবর্তন এনেছেন খাবারের পরিমাণ বা আকারে।
হোটেলমালিকেরা বলছেন, গত কয়েক মাসে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের বোতল, সয়াবিন তেল, আটা, ময়দা সবকিছুর দাম বেড়েছে। মাছ-মাংসেরও দাম বেশি। অন্য বছরের তুলনায় দাম বাড়তি সবজিরও। তাই খাবারের দাম বাড়ানো অথবা আকার ছোট করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না বলেও হোটেলমালিকেরা জানান।
রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ডিএনসিসি পাকা মার্কেটের পাশে মসজিদের গলিতে ভাজাপোড়া বিক্রি করেন সুমন মিয়া। তাঁর দোকানে পাঁচ টাকায় শিঙাড়া, সমুচা, চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু পাওয়া যায়।
বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পাঁচ টাকায় এসব খাবার বিক্রি করছেন কীভাবে—জানতে চাইলে সুমনের সহজ উত্তর, ‘সাইজ (আকার) আগের চাইতে ছোট কইরা দিছি। যেটুকু জিনিস দিয়ে আগে ৫০টি শিঙাড়া বানাতাম, একই পরিমাণ জিনিস দিয়ে এখন আরও ১০টা বেশি বানাই।’ বাজারের খারাপ পরিস্থিতিতে ক্রেতা হারানোর ভয়ে দাম বাড়াননি বলেও তিনি জানান।
ওই দোকানে খাচ্ছিলেন মো. আসলাম আলী। বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে। কড়াইল বস্তিতে রিকশার গ্যারেজেই থাকেন আর গুলশান এলাকায় রিকশা চালান। তিনি বলেন, ‘আগে দুপুরে দুইটা পরোটা ও এক বাটি ডালভাজি খাইতাম। লাগত ২০ টাকা। এখন লাগে ৩৫ টাকা লাগে। তাই এগুলো বাদ দিছি। এখন শিঙাড়া, সমুচা—এগুলাই খাই।’ গরিবের কষ্ট নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও ক্রেতা হারানোর ভয়ে নিজের ভাজাপোড়ার দোকানে খাবারের দাম বাড়াননি বলে জানান আফতাবনগর আবাসিক এলাকার সালাম ব্যাপারী। দাম না বাড়ানোর কারণে তাঁর লাভ প্রায় এক–তৃতীয়াংশ কমে গেছে বলে জানান এই বিক্রেতা।
খাবারের আকারে পরিবর্তন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের হাতে টাকা নাই। খাইতেও আসে কম। এই অবস্থায় দাম বাড়াইলে তো আর কেউ খাইতেই আসব না।’ আগে দোকানের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব মালপত্র ২ হাজার ২০০ টাকায় কিনতেন, এখন সেগুলো কিনতে প্রায় ৩ হাজার টাকা লাগছে বলে জানালেন।
তবে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে এখনো দাম বাড়েনি বলে জানা গেছে। তবে যেসব খাবার বিক্রি করে লাভ থাকছে না, সেগুলো আপাতত বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ওই মালিকেরা।
দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ফার্মগেটের জননী রেস্তোরাঁয় শিঙাড়া, সমুচা, পুরি, চপ প্রভৃতি খাবার তৈরি ও বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। হোটেলটির ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ওগুলোতে বেশি তেল লাগে। তাই খরচ কুলাতে না পেরে বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় একদম বাজে অবস্থা। তাই কিছু খাবারের দাম সামান্য কিছু বাড়ানো হয়েছে।’ হোটেলমালিকদের অবস্থা ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’র মতো জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বিক্রি কমে গেছে। বাজারে সংকট থাকলে মানুষও হোটেল-রেস্তোরাঁতে খেতে যায় না। তাই এখন দাম বাড়ালে ব্যবসা আর চলবে না।
টিসিবি থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বলে জানালেন ইমরান হাসান।