বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে মামলার শুনানি শেষে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ জামিন নামঞ্জুর করেন।
আয়শার আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলা জজ আদালতে আয়শার জামিন আবেদন না মঞ্জুর হওয়ায় অচিরেই আমরা উচ্চ আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করব।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বরগুনা জেলা জজ আদালতে আয়শার জামিন শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আয়শার পক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা পাল্টা যুক্তি দিয়ে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। এরপর সাড়ে ১২টার দিকে উভয় পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলে। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের পর বেলা একটার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবিরকে মামলা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র ও নথি নিয়ে আদালতে তলব করেন বিচারক। বেলা দুইটার দিকে ফের আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, এই হত্যাকাণ্ডে আয়শার সম্পৃক্তরা কী প্রমাণ আছে?
তখন তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ, হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে আয়শা হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মুঠোফোনে কথোপকথনের তথ্য (কললিস্ট) আদালতে উপস্থাপন করেন। ল্যাপটপে ঘটনার ভিডিওটি দেখেন বিচারক। আয়শার আইনজীবীরা তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন। আইনজীবীরা তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, আয়শা নয়ন বন্ডের সঙ্গে ফোনে কথা বলায় যদি তিনি মামলার আসামি হন, তাহলে যে পুলিশ কর্মকর্তা নয়ন বন্ডের সঙ্গে ৭৭ বার কথা বললেন, তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? এসব প্রশ্নের তিনি কোনো জবাব দেননি। এরপর বেলা তিনটার দিকে বিচারক আয়শার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আয়শার পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ফারুক আহেমদ আবদুর রশিদ, নিনা গোস্বামী, ব্লাস্টের বরিশাল শাখার পক্ষে সাঈদা তালুকদার, জে এম সহিদুজ্জামান। আর রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ভূবণ চন্দ্র হালদারসহ অন্তত ৫০ আইনজীবী।
এ দিকে গত ২৩ জুলাই আয়শার পক্ষে তাঁর আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করলে বিচারক আজ মঙ্গলবার আবেদনের শুনানির দিন ধার্য্ করেছিলেন। এর আগে গত ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো.সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে আয়শার পক্ষে জামিনের আবেদন নাকচ হয়। রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আয়শা এখন কারাগারে আছেন। তবে মঙ্গলবার জামিন শুনানির সময় আয়শা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম গত ১৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ও ১৪ জুলাইয়ের মানববন্ধন করে রিফাত হত্যায় তাঁর স্ত্রী আয়শার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে আয়শাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেন। ১৪ জুলাইয়ের ওই মানববন্ধনে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ বক্তৃতা দেন। এরপর গত ১৬ জুলাই সকালে আয়শাকে তাঁর বাড়ি থেকে পুলিশ লাইনসে ডেকে নেওয়া হয়। প্রায় ১৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আয়শাকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয় পুলিশ। তবে শুরু থেকেই আয়শার গ্রেপ্তার প্রভাবশালী মহলকে পুলিশের বাঁচানোর কৌশল বলে দাবি করে আসছেন তাঁর বাবা মোজ্জামেল হোসেন।
পুলিশ বলছে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ২ জুলাই এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যার ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হলে সাড়া দেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শাকে। কিন্তু আয়শার শ্বশুর মামলা ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলাটি তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়।