- রিং রোড ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যে অন্তত ১৭০টি লেগুনা চলাচল করে।
- নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাস্তার মাঝখানে লেগুনায় যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়।
রাজধানীর শ্যামলী স্কয়ার এলাকায় ‘রিং রোডের’ দুপাশেই গাড়িগুলোকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বহুক্ষণ। যানজট সেখানে নিত্যদৃশ্য। রাস্তার মাঝখানে লেগুনা দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোই এটির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয় দোকানি ও গাড়ির যাত্রীরা।
মোহাম্মদপুর শেরেবাংলা রোড শিয়া মসজিদ থেকে রাস্তাটি শ্যামলী মোড়ে এসে মিরপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মূলত এই এলাকার বাসিন্দা এবং চলাচলকারীরা বাহন হিসেবে রিকশা ও লেগুনাই বেশি ব্যবহার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিং রোড ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যে অন্তত ১৭০টি লেগুনা চলাচল করে। এর মধ্যে ঢাকা উদ্যান থেকে রিং রোড হয়ে শ্যামলী স্কয়ার পর্যন্ত চলে ৪০টি। এ ছাড়া শিয়া মসজিদ থেকে শ্যামলী-মহাখালী হয়ে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত ৫০টি, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে শ্যামলী হয়ে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত ৪০টি ও মিরপুর ১ নম্বর থেকে শ্যামলী স্কয়ার হয়ে ধানমন্ডির জিগাতলা পর্যন্ত অন্তত ৪০টি লেগুনায় যাত্রী পরিবহন করা হয়।
শ্যামলী স্কয়ারের উল্টো দিকে পিসিকালচার মার্কেটে ২৩ বছর ধরে ব্যবসা করেন দ্বীন ইসলাম। তিনি জানালেন, একটা সময় এই রাস্তায় কোনো যানজট ছিল না। কিন্তু এখন তা প্রতিদিনের চিত্র। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাস্তার মাঝখানে লেগুনায় যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়। এটিই যানজটের মূল কারণ।
রিং রোডে (শ্যামলী-ঢাকা উদ্যান) চার বছর ধরে লেগুনা চালান ২০ বছর বয়সী এক চালাক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনেক খরচ। প্রতিদিন ৫০০ টাকা দিই। রাস্তায় গাড়িতে যাত্রী ওঠা-নামা করাব বলেই প্রতিদিন টাকা দিই।’ মালিক সমিতির মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশকে এই টাকার ভাগ দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে মালিক সমিতির কারও নাম বলতে রাজি হননি এই চালক। তবে অনেক সময় যাত্রীদের কথামতোও রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করাতে হয় বলে জানান তিনি।
মালিক সমিতিই রাস্তার ‘সবকিছু দেখে’ বলে জানালেন আরেক লেগুনাচালক সুজন। তাঁর দাবি, শুধু লেগুনার কারণেই রাস্তায় যানজট লাগে বিষয়টি এমন নয়। অন্য গাড়িগুলোও রাস্তার ওপর দাঁড় করানো থাকে।
সম্প্রতি শ্যামলী স্কয়ারে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট হাসিনা। তিনি দাবি করেন, তাঁরা তৎপর থাকেন। ফলে রাস্তায় লেগুনা দাঁড়ায় না। কিন্তু তখন অন্তত ১০টি লেগুনা শ্যামলী স্কয়ারের রিং রোডে দাঁড়ানো ছিল। সে দিকে ইঙ্গিত করলে তিনি বলেন, যাত্রীরা রাস্তায় লেগুনা দাঁড় করালে অনেক সময় তাঁদের কিছু বলার থাকে না।
প্রতিদিন এ বিষয়ে উড়াল পাখি (ঢাকা উদ্যান-শ্যামলী) পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মনির মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ কেটে দেন। কিন্তু পরে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। তবে বাংলার তরী নামে চলা লেগুনাগুলোর মালিক সমিতির সহসভাপতি বাহাউদ্দিন ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, রোডভেদে চাঁদার পরিমাণ ভিন্ন। কোনো রোডে ৩৫০ টাকা আবার কোনো লাইনে ৪৫০ টাকা করে দিতে হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম অঞ্চলের উপকমিশনার লিটন কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের চাঁদার ভাগ দেওয়ার অভিযোগ অসত্য। অভিযোগকারীরা আসলে কথাগুলো জেনে বলছে না। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। আর অভিযান বেশি চালালেই চালকদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ আসে।