গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি রাকিবুল হাসান (রিগ্যান) আদালতের কাছে দাবি করেছেন, রায় ঘোষণার দিন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাঁকে আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপিটি দিয়েছিলেন। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আজ মঙ্গলবার এ দাবি করেন রাকিবুল হাসান।
ওই ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৬ সালে করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার রাকিবুলসহ অন্য আসামিদের আজ আদালতে হাজির করা হয়। শুনানির সময় আদালত রাকিবুলের কাছে জানতে চান, রায় ঘোষণার দিন পরা টুপি তিনি (রাকিবুল) কোথায় পেয়েছিলেন? জবাবে রাকিবুল আদালতে বলেন, ভিড়ের মধ্যে অজ্ঞাত এক লোক তাঁকে টুপিটি দিয়েছিল। যে লোক টুপি দিয়েছে, তাকে তিনি চেনেন না।
হোলি আর্টিজান হামলা মামলায় গত বুধবার রাকিবুল, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানে অভিজাত রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে আইএস মতাদর্শ অনুসরণকারী পাঁচ জঙ্গি হামলা চালান। তাঁরা বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের, তিনজন বাংলাদেশি, একজন ভারতীয় নাগরিক। এ ছাড়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন জঙ্গিদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড ও গুলিতে।
বুধবার এই মামলার রায় ঘোষণার পরই রাকিবুল আইএসের প্রতীকসংবলিত টুপি পরে এজলাস থেকে বের হন। এরপর প্রিজন ভ্যানে আরেক জঙ্গি জাহাঙ্গীর হোসেনের মাথায়ও একই ধরনের টুপি দেখা যায়। যদিও হোলি আর্টিজানে হামলার পর থেকেই পুলিশ দাবি করে আসছে, জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
আবার কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, হোলি আর্টিজান বেকারি হামলা মামলায় রায়ের পর দুই আসামি আইএসের যে টুপি পরেছিলেন, তা কারাগার থেকে আনা হয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রিজন) কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, তাঁরা কারাগারের সংশ্লিষ্ট স্থানের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছেন। কারাগারে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই দিন জঙ্গিরা কারাগার থেকে কোনো টুপি নিয়ে বের হননি। সেদিন আদালতে আনার সময় প্রিজন ভ্যানে তোলার আগে তল্লাশি করা হয়েছিল। তখনো কোনো টুপি পাওয়া যায়নি। এমনকি আদালত থেকে এই আসামিদের কারাগারে ফেরত আনার পরও তল্লাশি করা হয়। সে সময়ও এমন কোনো টুপি তাঁদের কাছে পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে ‘জাহাজবাড়ি’ বলে পরিচিত বাড়িতে জঙ্গিদের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ‘অপারেশন স্ট্রম-২৬’ নামের ওই অভিযানে নয়জন নিহত হন। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান নামের একজনকে।
এই মামলা তদন্ত করে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট রাকিবুল হাসানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। গত ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
সরকারি কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান বলেন, এই মামলার পলাতক এক আসামির সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মামলার আসামিরা হলেন আসলাম হোসেন র্যাশ, শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ, মামুনুর রশিদ রিপন, আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট, আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, সালাহ উদ্দিন কামরান, আবদুর রউফ প্রধান, আবদুস সবুর খান, হাদিসুর রহমান সাগর ও রাকিবুল হাসান রিগ্যান।
পলাতক আছেন আসামি আজাদুল। জামিনে আছেন কাশেম ও রউফ।