>২৮ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত ১০৫ জন অসুস্থ রোগীকে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতাল পৌঁছে দিয়েছেন রাশেদ।
মুহাম্মদ মুসার (৫০) একটি কিডনি বিকল। বাজারে ছোট্ট দরজি দোকানে কাজ করতেন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে সেটি বন্ধ। বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় যানবাহনসংকটে হাসপাতালে যেতে পারছিলেন না। এক সপ্তাহ ধরে ঘরে ছিল না খাবার। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না।
এমন পরিস্থিতিতে পাশের বাসার এক ব্যক্তি ফেসবুকে দেখে তাঁদের জানান এক তরুণের বিনা মূল্যে পরিবহনসেবা দেওয়ার কথা। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে এক সপ্তাহের খাদ্য ও নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হাজির হন মুহাম্মদ রাশেদ উদ্দিন (৩০) নামের ওই যুবক। পরিবারটির হাতে খাদ্যসহায়তা তুলে দিয়ে অসুস্থ মুসাকে তুলে নেন নিজের গাড়িতে। এরপর রওনা দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দিনভর চিকিৎসা শেষে সন্ধ্যায় মুসাকে আবার বাড়িতে পৌঁছে দেন।
এটি চট্টগ্রামের রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের হারপাড়া গ্রামের ঘটনা।
রাশেদ উদ্দিন একজন স্যানিটারি ও হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। বাড়ি রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মইশকরম গ্রামে। ইউনিয়নের বৈইজ্জ্যাখালী গেটে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। করোনাকাল শুরু হওয়ার পর ২৮ মার্চ থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১০৫ জন অসুস্থ রোগীকে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। আবার হাসপাতাল থেকে রোগীকে বাড়ি পৌঁছে দেন।
অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার পাশাপাশি এ পর্যন্ত রাশেদ ব্যক্তিগতভাবে ৩১০ জনকে খাদ্যসহায়তাও দিয়েছেন। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করছেন তাঁর বন্ধু মুহাম্মদ তৈয়ব। তাঁরা দুজনেই রাউজান স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের কর্মী। রাশেদ উদ্দিন তাঁর
গাড়ির সামনে কাগজে লিখে দিয়েছেন ‘মানবতার বাহন’। রোগীর বাড়ি থেকে ফোন এলে কখনো রাশেদ, আবার কখনো তৈয়ব গাড়ি চালিয়ে ছুটে যান রোগীর বাড়ি।
রাশেদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় লকডাউন শুরু হওয়ার পর একদিন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ি না পেয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। এ অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সিদ্ধান্ত নেন এই দুঃসময়ে অসুস্থ রোগীদের জন্য এই সেবাটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপর তিনি এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
এ পর্যন্ত যাঁদের সেবা দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ক্যানসার, কিডনি, ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল অন্তঃসত্ত্বা নারী। এর সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫। এসব রোগীকে নিয়ে চট্টগ্রামের অন্তত ১৮ থেকে ২০টি হাসপাতালে যাওয়া–আসা করেন রাশেদ।
রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন রাউজানের উরকিরচর, পাহাড়তলী, নোয়াপাড়া, পশ্চিম গুজরা, রাউজান সদর ইউনিয়ন, হাটহাজারী বুড়িশ্চর, মধ্যম মাদার্শা ইউনিয়ন, আমান বাজার, সরকারহাট, চান্দগাঁও রাস্তার মাথা, বোয়ালখালী ও রাঙ্গুনিয়া এলাকার।
সেবা পাওয়া এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বামী মুহাম্মদ হাসান বলেন, ‘সেদিন গভীর রাতে আমার স্ত্রী রোশনী আকতারের প্রসববেদনা শুরু হয়। কোথাও গাড়ি পাচ্ছিলাম না। ফেসবুক থেকে নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করলে নিজের গাড়ি নিয়ে চলে আসেন রাশেদ ভাই। আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় রক্তদাতাদেরও হাসপাতালে আনা–নেওয়া করেন তিনি। শেষে তিন দিন পর বাচ্চাসহ আমাদের বাসায় পৌঁছে দেন তিনি।’
উরকিরচর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকটকালে যারা অসুস্থ মানুষের পাশে থাকে, তারা বড় যোদ্ধা। রাশেদ তাদের একজন।’