সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তাতে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। পাঁচ মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো চুক্তি সই হয়নি। ফলে কবে টিকা পাওয়া যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে স্পুতনিক-ভি টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে গত মার্চে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত মাসে টিকা কেনার চুক্তির সপ্তম খসড়া রাশিয়ার কাছে পাঠানো হয়। তবে তা সইয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কেনার চুক্তি সইয়ের পর রাশিয়ার গামালিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডিমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি বাংলাদেশের জন্য স্পুতনিক-ভি টিকা সরবরাহ করবে। সেই টিকা বাংলাদেশ পাবে রাশিয়ার সংস্থা রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্ট ফান্ডের (আরডিআইএফ) মাধ্যমে। কারণ, তাদের সঙ্গেই বাংলাদেশ চুক্তি করবে।
রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি কত দূর জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গত মাসেই চুক্তির সর্বশেষ খসড়ার ওপর মতামত পাঠিয়েছি। আশা করছি চুক্তিটি এ মাসে সই হয়ে যাবে। রাশিয়ায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারা হয়তো আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে টিকা সরবরাহ করতে চাইছে।’
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানটির টিকা উৎপাদনক্ষমতা সম্ভবত তত বেশি নয়। তা ছাড়া এরই মধ্যে রাশিয়া ৬৫টি দেশের সঙ্গে টিকা সরবরাহের চুক্তি সই করেছে। কাজেই আগে যাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তাদের টিকা সরবরাহে অগ্রাধিকারের বাধ্যবাধকতা তো আছেই।
ভারত গত মার্চের দিকে করোনার টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ অন্য দেশে খোঁজ শুরু করে। সে ক্ষেত্রে বড় উৎস হিসেবে বিবেচনায় আসে চীন ও রাশিয়া। চীনের সঙ্গে ইতিমধ্যে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। আর আরও ছয় কোটি ডোজ কেনার বিষয়ে প্রস্তাব গত বুধবার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
ওদিকে টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স বাংলাদেশকে আগেই চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিনা মূল্যে ছয় কোটি ডোজ টিকা দেবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পর্যালোচনা হলো, রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কিনতে দেরির বড় কারণ বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে কত টিকা কিনবে, তা আগেভাগে ঠিক করতে পারেনি। শুরুতে রাশিয়ার কাছে বাংলাদেশ কয়েক কোটি টিকা কিনতে চেয়েছিল। এরপর অন্যান্য উৎস থেকেও টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে সরকারের মধ্যে এমন ভাবনাও আসে যে নানা উৎস থেকে এত টিকার জন্য চাহিদাপত্র দেওয়াটা ঠিক হবে না। পরে রাশিয়ার কাছে কম পরিমাণ টিকা কেনার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। একপর্যায়ে রাশিয়া বিরক্ত হয়ে বাংলাদেশকে জানায়, ঠিক কত টিকা লাগবে, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। তা না হলে যে টিকার জন্য চাহিদাপত্র দেওয়া হবে, তার পুরোটাই নিতে হবে।
বিভিন্ন উৎস থেকে করোনার টিকা কেনাকাটা ও সংগ্রহে জড়িত সরকারের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, স্পুতনিক-ভি টিকা অন্য টিকার মতো নয়। এর প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দুই ধরনের। তাই শুরু থেকেই সরকার একই চালানে প্রথম ডোজের সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজও চাইছিল।
রাশিয়ার কাছ থেকে স্পুতনিক-ভি টিকা কেনার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকা কেনার চুক্তিটি এ মাসে চূড়ান্ত হয়ে গেলে আশা করছি এক মাসের মধ্যে প্রথম চালান বাংলাদেশ পাবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাশিয়া থেকে এক কোটি টিকা কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।’
এদিকে বাংলাদেশে যৌথভাবে স্পুতনিক-ভি টিকা উৎপাদন ও কেনার বিষয়ে এ দেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার আরডিআইএফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে বিষয়টি এগোয়নি। এখন পর্যন্ত স্পুতনিক-ভি উৎপাদনের জন্য রাশিয়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অরুগালফ হেলথ ইনভেস্টমেন্টের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে।