রামপুরা ও হাতিরঝিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

রামপুরা স্লুইসগেটের দুই প্রান্তেই প্রায় সমান উচ্চতার পানি। ভেতর–বাইরে সামান্য তারতম্য থাকায় স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে।
রামপুরা স্লুইসগেটের দুই প্রান্তেই প্রায় সমান উচ্চতার পানি। ভেতর–বাইরে সামান্য তারতম্য থাকায় স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে।

গত সপ্তাহে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে রামপুরা স্লুইসগেটের ভেতর ও বাইরে পানির উচ্চতা প্রায় সমান পর্যায়ে এসেছে। এখন গেটের বাইরে খাল ও বালু নদ প্রান্তে পানির উচ্চতা ৫ মিটার। ভেতরে হাতিরঝিলের দিকে উচ্চতা ৪ দশমিক ৮ মিটার। ভেতর–বাইরে সামান্য তারতম্য থাকায় স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

স্লুইসগেট খুলে দিলে বাইরের পানি ভেতরে প্রবেশ করবে। এতে রামপুরা ও হাতিরঝিলের চারপাশের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাবে। সামনে ভারী বৃষ্টি হলে এসব এলাকায় এবার স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় সবগুলো পাম্প চালিয়ে দ্রুত ভেতরের পানি বাইরে ফেলার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃষ্টিতে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ত্রিমোহিনী, দাসেরকান্দি, ফকিরখালী বেরাইদসহ আশপাশের এলাকা, বালু নদের পশ্চিম পাড়সংলগ্ন ডেমরার আমুলিয়া, মেহেন্দিপুর, কায়েতপাড়া, পাইটিসহ পুরো এলাকার নিম্নাঞ্চলেও পানি জমেছে। বালু ও তুরাগ নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে এসব এলাকায়ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা হবে।

কারওয়ান বাজারসহ হাতিরঝিলের চারপাশের লোকালয়ের গৃহস্থালি, পয়োবর্জ্য এবং বৃষ্টির পানি বেগুনবাড়ি খালের মধ্য দিয়ে রামপুরা স্লুইসগেট হয়ে বালু নদে যায়। আবার নদের পানি বাড়লে খাল দিয়ে স্লুইসগেট দিয়ে পানি এসব এলাকায় আসে। গেট বন্ধ করায় ভেতরের পানি বেরিয়ে যেতে পারছে না। এসব এলাকার পানি বেগুনবাড়ি খালে আটকে আছে। ঢাকা ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র এবং এলাকায় গিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়।

রামপুরা স্লুইসগেটে পানি আসে প্রধানত বালু নদ থেকে বেগুনবাড়ি খালের মাধ্যমে। হাতিরঝিল এই খালেরই একটি অংশ। গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, হাতিরঝিলে পানি আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। সাধারণত হাতিরঝিলে এ সময় পানির উচ্চতা থাকে ৪ মিটার। কিন্তু এখন তা বেড়ে সাড়ে ৪ মিটার হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে পানির উচ্চতা আরও বাড়বে। জলাবদ্ধতা রোধ করতে হলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে হবে।

>স্লুইসগেটে পানি বাড়ছে 
স্লুইসগেট খুলে দিলে বাইরের পানি ভেতরে প্রবেশ করবে
এতে রামপুরা ও হাতিরঝিলের চারপাশের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাবে


ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানি বালু নদ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়লে বালু নদের পানিও বাড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপ অনুসারে গতকাল বালু নদের পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ১৩ মিটার। নদের পানি আর ৫৪ সেন্টিমিটার বাড়লে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এসব কারণে রামপুরা স্লুইসগেট খুলে রাখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, গেট খুলে রাখলে নদের পানি বিপরীত দিক থেকে ভেতরে রামপুরা এলাকায় প্রবেশ করবে। এই পরিস্থিতিতে ভারী বৃষ্টি হলে গেটের ভেতরের পুরো এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে রামপুরা, উলন, বাড্ডা, মধুবাগ, বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও, টঙ্গী ডাইভারশন রোড, দিলু রোডসহ চারপাশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদের জলাবদ্ধতার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।

পাউবোর দায়িত্বশীল সূত্রমতে, রামপুরা স্লুইসগেটটি ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৮ সালে এই স্লুইসগেট দিয়ে বালু নদের পানি ভেতরে ঢুকে পড়ায় রামপুরা, উলন, বাড্ডা ছাড়াও শুক্রাবাদ, তল্লাবাগ, গুলশান-বনানী-বারিধারা, কূটনৈতিকপাড়াসহ নিরাপদ জায়গাগুলোতেও দীর্ঘ মেয়াদের ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল।

গতকাল বিকেলে রামপুরা সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গেটের ভেতর ও বাইরে বেগুনবাড়ি খালের পানি প্রায় সমান উচ্চতায় রয়েছে। বাইরের পানি যেন ভেতরে আসতে না পারে সে জন্য আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্লুইসগেটের ২০টি কপাটের সবগুলোই বন্ধ অবস্থায় আছে। জানা যায়, গত শনিবার এই কপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্লুইসগেট এলাকায় পাম্পস্টেশনে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম বলেন, বাধ্য হয়ে স্লুইসগেট বন্ধ করা হয়েছে। কারণ, বাইরের পানি ভেতরে চলে এলে বড় সমস্যা হবে। তবে ভেতরের পানির পরিমাণ কমানোর জন্য পাম্প করে বাইরে ফেলা হচ্ছে।

স্লুইসগেট এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পাঁচটি নিষ্কাশন পাম্প রয়েছে। ২০১৬ সালের জুন মাসে এগুলো চালু হয়। প্রতিটি পাম্পের পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে ৫ কিউমেক ঘনমিটার। গত মঙ্গলবার একটি পাম্প বিকল হয়ে যায়। গতকাল বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে দুটি পাম্প চালু ছিল। ফলে ভেতর থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছিল কম। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পাম্প বন্ধ হলেও দ্রুত মেরামত করা হয়েছে। তবে পাম্পস্টেশনের একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঝেমধ্যেই কোনো কোনো পাম্প অকেজো হয়ে যায়। আপাতত মেরামত করে চালু করা হলেও যেকোনো সময় আবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার মাঝেমধ্যে পাম্প চালানোও হয় না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এবং হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, গতকাল সকালে হাতিরঝিলের ভেতরের জলাশয়ে পানির উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ৫ মিটার। টানা বৃষ্টি হলে পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে গেলে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই স্লুইসগেটের ভেতরের পানি তো বটেই, হাতিরঝিলের ভেতরের পানিও অন্তত ৪ মিটারের মধ্যে নামিয়ে আনা উচিত। এ জন্য পাম্পগুলো চালিয়ে দ্রুত পানি সেচ করে বাইরে ফেলা জরুরি।