‘আমাদের আমের রাজ্যে বড় নবাব হচ্ছে ক্ষীরশা আর ছোট নবাব ক্ষুদিক্ষীরশা।’এই মন্তব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মসজিদপাড়ার জহিরুল ইসলামের। তিনি প্রতিবছর বাজার থেকে খুঁজে খুঁজে পছন্দের আম কেনেন। বাজারে না পেলে ক্ষুদিক্ষীরশার গাছ খুঁজে বের করেন। এরপর সে বাগানে গিয়ে আম কিনে আনেন। ক্ষুদিক্ষীরশার মৌসুমে বাইরের জেলার অতিথি এলে এই আম খাওয়ান তিনি।
জহিরুলের এই মতকে সমর্থন করলেন আমবিজ্ঞানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জমির উদ্দীন। তিনিও এই আমের ভক্ত। জমির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষীরশাপাতি আমের চেয়ে আকারে ছোট, কিন্তু চেহারায় মিল আছে বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক মানুষ আমটিকে ক্ষুদিক্ষীরশা বলেন। কিন্তু কাগজে–কলমে আমটি রানিপসন্দ নামে স্বীকৃত। চেনা–জানা আমপ্রেমীরা এটা জানেন। ক্ষীরশার খুদে সংস্করণ বলে স্থানীয় লোকজন একে ক্ষুদিক্ষীরসা বলে। তিনি বলেন, ‘আমি আমের রাজ্যের (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) বাসিন্দা বলে ছোটবেলা থেকে আমটি চিনি এবং এর ভক্ত। আমার ধারণা, আমটি তৃপ্ত করতে পারে যেকোনো রসনাবিলাসীকে।’
জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মতো ক্ষুদিক্ষীরশা বা রানিপসন্দপ্রেমী লোকের অভাব নেই। কিন্তু বাজারে এ আমের অভাব আছে। দামও কম না।’
রানিপসন্দ মানে রানির পছন্দ। রানি তো যা তা জিনিস পছন্দ করেন না। তার পছন্দের জিনিসটি হতে হবে উৎকৃষ্ট মানের। পরিপুষ্ট হয়ে পাকলে এই আমটিও তেমনই উৎকৃষ্ট মানের বলে মত দিয়েছেন আম বিশেষজ্ঞরা। এর স্বাদ নিলে নামকরণ যথার্থও মানবেন আপনি। আমপ্রেমীদের কাছে ক্ষুদিক্ষীরশা মানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত জাত, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত ক্ষীরশাপাতির খুদে সংস্করণ। ক্ষীরশার (ক্ষীরশাপাতির সংক্ষিপ্ত নাম) পিছে পিছে চলে এটি। অনেকটা ছোট ভাই বড় ভাই সম্পর্ক।
আমটি নিয়ে বিজ্ঞানী জমির উদ্দীন জানান, নতুন করে এ জাতের আমগাছ মানুষ খুব একটা রোপণ করছে না। পুরোনো অনেক গাছ কাটাও পড়ছে। এ জন্য বাজারে এ আমের সরবরাহ কম। এভাবে চলতে থাকলে এত ভালো এই জাতটি একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সুমিষ্ট আঁশহীন এ আমের প্রসার ঘটা দরকার। নির্বাচনের মাধ্যমে এ আমটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মুক্তায়িত করতে পারে। এতে আমটির প্রসার ঘটবে এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বটতলা হাটের পাশে কুমারপাড়ায় প্রায় দেড় শ বছরের এক পুরোনো আমবাগান। পুরোনো গাছের সঙ্গে মাঝারি নতুন গাছও আছে এই ৮০ বিঘার বাগানে। সব মিলিয়ে ২৫০টি গাছের কম নয়। এর মধ্যে ক্ষুদিক্ষীরশা বা রানিপসন্দ জাতের গাছ আছে মাত্র চারটি। এ বাগানের ফল ক্রেতা শওকত আলী (৫২)। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন আমবাগানে তাঁর বিচরণ। এ আম তাঁরও খুব প্রিয়।
সম্প্রতি ওই বাগানে গেলে তিনি ওই গাছের কাছে নিয়ে আম দেখান এই প্রতিবেদককে। বেশি দাম পাওয়ার আশায় তিনি এখনো রানিপসন্দ আম পাড়েননি।