সুনামগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার রাতের ভারী বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি আবার কিছুটা বেড়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকেই সুনামগঞ্জের আকাশে মেঘ দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। লোকজন এ অবস্থাতেই ধান কাটছেন। তবে রাতের বৃষ্টিতে বিভিন্ন উপজেলায় হাওরের বাঁধে সমস্যা দেখা দেয়। এসব বাঁধের সংস্কারকাজ চলছে। গতকাল রাতে বা আজ বুধবার সকালে কোথাও কোনো হাওরে বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া যায়নি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি ৫ দশমিক ৯৩ মিটারে ছিল। সুরমা নদীর পানি গতকাল বিকেলের তুলনায় এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা থেকে ১২ সেন্টিমিটার নিচে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ মিলিমিটার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাতের বৃষ্টিতে জেলার তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের দুমাল ও লামাগাঁও এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধে সমস্যা দেখা দেয়। সেখানে বাবুর জাঙ্গাল এলাকায় বিকল্প আরেকটি বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। রাতেই সেখানে লোকজন নিয়ে কাজ করেছেন প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তারা। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার পানি খুব একটা বাড়েনি। তবে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় কাজে সমস্যা হচ্ছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বৃষ্টিতে খাই হাওরের রাঙামাটি ও শালদিঘার হাওরের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। খবর পেয়ে রাতেই সেখানে যান ইউএনও আনোয়ার উজ জামান ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন। তাঁরা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে সেখানে কাজ করেন। জামালগঞ্জের ইউএনও বিশ্বজিত দেব জানান, তাঁর উপজেলায় এখনো কোনো হাওরে ফসলহানি হয়নি। উপজেলার মহালিয়া হাওরের হেরারকান্দা বাঁধে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সেটিতে মাটি ফেলে বাঁধটি টেকসই করা হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও সাদি উর রহিম জাদিদ আজ সকালে জানান, তাঁর উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে হাওরের ভেতরে আছে ৭ হাজার ৩০ হেক্টর। হাওরের ভেতরের ধানের ৭১ শতাংশ কাটা হয়ে গেছে। হাওরের উঁচু অংশে থাকা ধানে ঝুঁকি কম এবং সেগুলো এখনো আধপাকা। তাঁরা যেখানেই পাকা ধান দেখছেন, কৃষকদের সেগুলো কাটতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জে এবার প্রথম দফা পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে ৩০ মার্চ। এতে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পায়। ঝুঁকিতে পড়ে জেলার সব হাওরের বোরো ধান। একের পর এক হাওরের বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে ঢলের পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের ফসল। ইতিমধ্যে জেলার ১৭টি ছোট–বড় হাওর ও বিলের ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির ধান তলিয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। প্রথম দফা পাহাড়ি ঢলের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবার দ্বিতীয় দফায় ঢল নামতে শুরু করে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ‘সুনামগঞ্জে এত দিন ভারী বৃষ্টি ছিল না। এখন দু-এক দিন থেকে রাতে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতেও বৃষ্টি ও ঝড় ছিল। এতে কোথাও কোথাও পানি সামান্য বেড়েছে। তবে কোনো হাওরের ফসলই এখন আর ঝুঁকিমুক্ত নয়। আমরা টানা ২০ দিন ধরে বাঁধগুলো রক্ষার চেষ্টা করছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত ধান কাটা এবং সেটাতেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি।’