রাজনীতিতে তরুণদের আগ্রহ দিন দিন কমছে। অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা, এককেন্দ্রিক রাজনীতি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব তরুণদের রাজনীতিতে অনাগ্রহী করে তুলেছে।
এ বছর প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপে যেসব তরুণের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অর্ধেকের বেশি এমন মত দিয়েছেন।
এবারের জরিপে সারা দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ১ হাজার ২০০ তরুণ অংশ নেন। তাঁদের ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ রাজনীতিতে অনাগ্রহী বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি চারজনের একজন বলেছেন, রাজনীতি নিয়ে তাঁরা কোনো চিন্তাই করেন না। আর ৩০ শতাংশ নিজেদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পছন্দ করেন না। ১ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ রাজনীতির বিষয়ে উত্তর দিতেও অনাগ্রহী ছিলেন।
এর আগে ২০১৭ সালে প্রথম আলো তারুণ্য জরিপ করেছিল। সেই জরিপে তরুণদের ৫১ দশমিক ২ শতাংশ রাজনীতি নিয়ে তাঁদের অনাগ্রহের কথা সরাসরি জানিয়েছিলেন। ২ বছরের ব্যবধানে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশে।
অবশ্য ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে একধরনের চিন্তাভাবনা আছে বলে এবারের জরিপে উঠে এসেছে। তবে এ অংশটিও যে রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী, তা বলা যাবে না। তাঁদের ১৪ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা রাজনীতি নিয়ে সচেতন, কিন্তু কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বা কোনো দলকে সমর্থন করেন না। আর ২১ দশমিক ৩ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন। কিন্তু সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।
রাজনীতিসচেতন কিন্তু দল সমর্থন করেন না—২০১৭ সালে এমন মনোভাবাপন্ন তরুণ ছিলেন ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তবে সমর্থন করেন এমনটি বলেছিলেন ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
এবারের জরিপ বলছে, তরুণদের খুব ছোট অংশ সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত। সেটা মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ২ বছর আগে এটা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
রাজনীতিতে মেয়েদের সম্পৃক্ততা একেবারেই নগণ্য। ছেলেদের চেয়ে রাজনীতি নিয়ে মেয়েদের আগ্রহও কম। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মেয়ে মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আর ছেলেদের ১০ দশমিক ৪ শতাংশ রাজনীতিতে জড়িত। রাজনীতিতে জড়িত না হলেও দলকে সমর্থন করেন এমন ছেলে যেখানে ২৬ শতাংশ, সেখানে মেয়ে ১৭ শতাংশ। ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ মেয়ে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পছন্দ করেন না। এমন মনোভাবের ছেলে ২২ শতাংশ।
গুণগত জরিপের সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি তরুণ মনে করেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মূল স্রোতের বিপরীতে কোনো মতামত ব্যক্ত করলে তার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে। এসব কারণে পরিবারও তরুণদের রাজনীতিতে জড়াতে দিতে চায় না।
বাকি তরুণেরা বলেছেন, রাজনীতিকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ধনসম্পদ, বিত্তবৈভব গড়ে তোলা এবং ক্ষমতাশালী হওয়ার জন্য মানুষ দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়। অবশ্য তাঁরা এটাও স্বীকার করেছেন যে এখনো কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে আসলেই অন্যদের সাহায্য করতে চান।
রাজনীতি নিয়ে শহর ও গ্রামের তরুণদের মনোভাব অনেকটাই কাছাকাছি। তবে শিক্ষিত তরুণদের তুলনায় নিরক্ষর তরুণেরা রাজনীতি নিয়ে বেশি উদাসীন। নিরক্ষর তরুণদের অর্ধেকের বেশি রাজনীতিতে জড়ানো পছন্দ করেন না। উচ্চশিক্ষিত বা ন্যূনতম স্নাতক পাস তরুণদের মধ্যে এমন মনোভাব কম, প্রায় ১২ শতাংশের মতো। আর প্রাথমিক পাস করেছেন এমন তরুণদের ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ২৫ শতাংশ রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো পছন্দ করেন না।
২০১৭ ও ২০১৯ সালের জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত তরুণের সংখ্যা কমেছে। রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেওয়ার হারও কমেছে। বিপরীতে রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করেন না বা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পছন্দ করেন না—এমন তরুণের সংখ্যা বেড়েছে।