>মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাম্প বিকল। পঙ্গু, শিশু ও জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পানি সরবরাহ বন্ধ।
পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী আজিরুন্নেসার হাতে দুটি পানির বোতল। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) মসজিদে পানি না পেয়ে তিনি জরুরি বিভাগের সামনে কাঁদছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাড়ে চার বছরের নাতনিকে নিয়ে দিন চারেক আগে হাসপাতালে এসেছেন সিরাজগঞ্জের এই নারী। গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে হাসপাতালে পানি নেই। পানি কেনার মতো সামর্থ্যও নেই দিনমজুর এই নারীর।
এ বিষয়ে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল গনি মোল্লা গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘পানি না থাকায় হাসপাতাল পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। এমনকি ওটিতে (অস্ত্রোপচার কক্ষ) যে পানির প্রয়োজন হয়, তা মেটাতে গাড়িতে করে পানিতে আনতে হয়েছে।’
পঙ্গু হাসপাতালের পেছনে ঢাকা ওয়াসার একটি পাম্প আছে। ওই পাম্প থেকে প্রতি মিনিটে ৩ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। পাম্পহাউস থেকে পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও জাতীয় মানসিক হাসপাতালে পানি সরবরাহ করা হয়। জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে ওয়াসার এই পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। তখন এটি মেরামত করা হয়। তবে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় পাম্পটি আবার বিকল হয়ে পড়ে। এতে তিনটি হাসপাতালে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না, তবে খোঁজ নিচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেন ১৬১৬২ নম্বরে অভিযোগ করতে।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ না করলে কি ওয়াসা সমস্যাটির সমাধান করবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তবু সমাধান করা হবে। এখানে অভিযোগ করলে তার রেকর্ড থাকে।’
গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও জাতীয় মানসিক হাসপাতালে অবস্থান করে পানির জন্য হাহাকারের চিত্র চোখে পড়ে। দুপুরে অনেককে পঙ্গু হাসপাতালের মসজিদ থেকে পানি আনতে দেখা গেছে। মনির মোল্লা গাজীপুর থেকে এসেছেন ভাইকে নিয়ে। হাসপাতালের মসজিদ থেকে দুই লিটারের চারটি বোতল ভরে পানি এনেছেন। প্রথম আলোকে মনির বলেন, ‘এ পানি এনেছি হাত-মুখ ধোয়া ও বাথরুমে ব্যবহারের জন্য। ৮০ টাকা দিয়ে খাওয়ার পানি কেনা হয়েছে।’
শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পানি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার রোগী ও তাঁদের সঙ্গে আসা স্বজনেরা। টাঙ্গাইল থেকে শফিকউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী শিশুকন্যা তুলিকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন দুই দিন ধরে। গতকাল সকালে পাশের একটি বস্তিতে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে এসেছেন শফিক। কিন্তু তাঁর স্ত্রী কোথাও যেতে পারেননি। এ পরিস্থিতিতে খাওয়ার পানি কিনে তা দিয়ে মুখ ধুয়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিশুর চিকিৎসা বাদ দিয়ে হয়তো তাঁদের বাড়িই ফিরে যেতে হবে।
একই চিত্র দেখা গেছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে।
ওয়াসার পাম্পহাউসে গিয়ে জানা যায়, গতকাল সারা দিন ঢাকা ওয়াসার কর্মীরা বিকল যন্ত্র মেরামতের চেষ্টা চালান। দুপুরে শনাক্ত হয় যে যন্ত্রটি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ওয়াসার পাম্প অপারেটর আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়াসার কর্মীরা দ্রুত যন্ত্রটি পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন। আশা করছি, আজকের মধ্যেই পানি সরবরাহ আবার চালু করতে পারব।’