রাজধানী ঢাকার উত্তরখানে একটি ফ্ল্যাটে গ্যাসের চুলা বন্ধ না রাখা, নাকি পাইপ লিকেজ থেকে আগুন লেগেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে পুলিশ মনে করছে, রাতে গ্যাস চলে যাওয়ায় অসাবধানতাবশত চুলা বন্ধ করেননি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। ভোরে গ্যাস চলে আসায় কক্ষগুলো গ্যাসে ভর্তি হয়ে থাকে, আগুন জ্বালানো মাত্র চারপাশে ভয়াবহভাবে তা ছড়িয়ে যায়।
আজ শনিবার ভোররাত চারটার দিকে উত্তরখানের ব্যাপারীপাড়া এলাকায় হেলাল মার্কেটের কাছে তিনতলা একটি ভবনের একটি ফ্ল্যাটে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। এতে ওই ফ্ল্যাটে বসবাসকারী তিন পরিবারের আটজন দগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে চারজন নারী, তিনজন পুরুষ ও একজন শিশু। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মো. আজিজুল (২৭)। তাঁর শরীরের শতকরা ৯৯ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসাধীন অন্য সাতজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
ওই বাড়ির বাসিন্দাদের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায়। তিনটি পরিবার সেখানে সাবলেট থাকে। স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় পরিবারের সদস্যরা চাকরি করেন। তবে দগ্ধ ব্যক্তিরা কে কার পরিবারের সদস্য, তা এখনো জানা যায়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে সাগরের (২২) ৬৬ শতাংশ, ডাবলুর (৩৩) ৬৫ শতাংশ, সুফিয়ার (৫০) ৯৯ শতাংশ, মুসলিমার (৪০) ৯৮ শতাংশ, পূর্ণিমার (৩৫) ৮০ শতাংশ, আবদুল্লাহর (৫) ১২ শতাংশ ও আঞ্জুর (২৫) ৬ শতাংশ পুড়ে গেছে।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ সংকর পাল প্রথম আলোকে বলেন, দগ্ধ প্রত্যেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শিশুটিসহ দুজন কম দগ্ধ হলেও শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তাঁদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁর মতে, আগুন খুব দ্রুত সবার গায়ে ধরে গিয়েছিল।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অসাবধানতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাতের বেলায় বাড়িটির চুলায় গ্যাস ছিল না। অসতর্ক অবস্থায় চুলার সুইচ বন্ধ না করেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। চুলায় গ্যাস আসার পর দরজা–জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাস বের হওয়ার পথ পায়নি। অন্য দিনের মতো ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ভোরে রান্না করতে উঠে আগুন জ্বালানো মাত্র চারপাশে আগুন ধরে যায়। ফ্ল্যাটে যে কয়জন ছিলেন, সবাই দগ্ধ হয়েছেন।
বাড়িওয়ালা মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেছেন, দেড় বছর আগে ওই তিন পরিবার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। তাঁরা সবাই গার্মেন্টসে কাজ করেন। তিনি জানান, আগুনে বাড়ির কাঠামোগত ক্ষতি কম হয়েছে।
উত্তরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। ফ্ল্যাটে তিনটি ছোট ছোট কক্ষ ও একটি রান্নাঘর। রান্নাঘরের চুলা থেকেই আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস তিন পরিবারের আটজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
মো. সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, গ্যাসের চুলা বন্ধ না রাখায়, নাকি গ্যাসের পাইপ লাইনে লিকেজ থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। দগ্ধ ব্যক্তিদের কে কার আত্মীয় বা পরিবারের সদস্য, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্বজনেরা কেউ এখনো হাসপাতালে এসে পৌঁছাননি।