রাঙামাটির কমলাবাগান

এবার পাহাড়ে কমলার ফলন ভালো। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের শৈলেশ্বরীর তালুকদার পাড়ায়। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
এবার পাহাড়ে কমলার ফলন ভালো। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের শৈলেশ্বরীর তালুকদার পাড়ায়।  ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

গাছে গাছে ঝুলছে পাকা কমলা। কমলার ভারে প্রায় সব ডাল নুয়ে পড়েছে। চাষি বাঁশের সাহায্যে আটকে রেখেছেন সেগুলো।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় বুড়িঘাট ইউনিয়নের শৈলেশ্বরীর তালুকদারপাড়ায় এই কমলাবাগান। রঞ্জন বিকাশ চাকমা এখানে কমলার চাষ করছেন। শুধু রঞ্জন বিকাশ চাকমা নন, একই পাড়ায় বিমল কান্তি চাকমা, বিজয় কান্তি চাকমা, জীবন প্রিয় চাকমা, সুপম চাকমাসহ অন্তত ২০ জন কমলাচাষি রয়েছেন।

কমলাচাষি রঞ্জন বিকাশ চাকমা জানান, ২০০৮ সালে ছয় একর জমিতে জাম্বুরা, মাল্টার সঙ্গে তিন শতাধিক কমলার চারা রোপণ করেন। ২০১৫ সালে এসে ২০ থেকে ৩০টি কমলাগাছে কিছু ফল আসা শুরু করে। ২০১৭ সালে দুই শতাধিক গাছে ফল আসে। সে সময় ৭০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করেন তিনি। গত বছর সব গাছে ফল আসে। মোট ছয় লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেন তিনি। চলতি বছর তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। এখনো গাছে অন্তত চার লাখ টাকার কমলা রয়েছে।

রাঙামাটির নানিয়ারচরে রঞ্জন বিকাশ চাকমার কমলাবাগানেই কথা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানকার কমলা এখন বিখ্যাত। রসে ভরা, মিষ্টি ও আকারে বড়। নানিয়ারচরের কমলা লোভনীয় হওয়ায় প্রতিবছর একটি পাকা কমলাবাগান সরেজমিন পরিদর্শনে আসি। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ কমলার জন্য খুবই উপযোগী।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানিয়ারচর উপজেলায় কমলাচাষিদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন স্বাবলম্বী হয়েছেন। এর মধ্যে গত চার বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন নানিয়ারচরের সাবেক্ষং ইউনিয়নের মধুসূদন তালুকদার। একই ইউনিয়নে চলতি বছর কয়েকজন কমলাচাষি দুই থেকে চার লাখ টাকা করে কমলা বিক্রি করেছেন। 

কৃষি কার্যালয় ও চাষিরা জানান, নানিয়ারচরে কমলার ফলন ভালো ও বেশ কিছু চাষি স্বাবলম্বী হওয়ায় অনেকেই কমলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার না করে শুধু প্রাকৃতিক উপায়ে কমলা চাষ হচ্ছে। সে জন্য নানিয়ারচরের কমলার কদর বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৯৫১ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ও সাবেক্ষং ইউনিয়নে চার শ একর জমিতে কমলার চাষ হয়। প্রতিবছর ওই এলাকায় আরও কমলাবাগান সৃষ্টি হচ্ছে বলে চাষিরা জানান। এ ছাড়া বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, রাজস্থলী ও বরকল উপজেলায় বেশ কিছু এলাকায় কমলার চাষ হচ্ছে।

নানিয়ারচরে আসলে সোনা ফলছে!