পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেছেন, ‘আমরা লড়াই করছি সারা বছর। আদিবাসী নারীরা সীমাহীন শোষণ-নির্যাতনের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে। বাচ্চা ছেলেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখার মতোই সরকার আমাদের জন্য কিছু করছে। আমরা কেউ বলতে পারছি না এ সংবিধান আমার। যে দল ক্ষমতায় যায়, সংবিধান তাদের হয়ে যায়।’
আজ রোববার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সামনে রেখে ‘টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ও বাংলাদেশের আদিবাসী নারী অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, ভেদাভেদযুক্ত পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারী-পুরুষে সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে নারীরা সীমাবদ্ধ জীবন থেকে বের হতে পারবে না। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (তাঁর ভাষায় আদিবাসী) নারীদের বেলায় তা তো অনেক দূরের পথ।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং কাপেং ফাউন্ডেশন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীতে দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব চঞ্চনা চাকমা। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্যসচিব সঞ্জীব দ্রুং। সভায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানবিষয়ক মূল বক্তব্য পড়ে শোনান ফাল্গুনী ত্রিপুরা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম অন এসডিজি, বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের বর্তমান যে অবস্থা, তার পেছনে নারীর প্রতি বিদ্যমান কাঠামোগত বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন এবং জাতীয় অবহেলা দায়ী। তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভাজিত তথ্যের জন্য জাতীয় আদমশুমারি করা, জাতীয় নির্বাচনে এই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে দল কথা বলবে, তাদের ভোট দেওয়া হবে না বলে আওয়াজ তুলতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
ইন্টারন্যাশনাল সিএইচটি কমিশনের সদস্য খুশি কবির বলেন, ‘বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী শব্দটাই ব্যবহারে অনীহা আছে। যে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের উন্নয়নে অঙ্গীকার ছিল, অতীতে কথাও বলেছে, ক্ষমতায় এসে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বাংলাদেশে নারীর অভিগম্যতা বাড়লেও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। আর এ প্রভাব বেশি পড়ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের ওপর।’
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, নারী নির্যাতন মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কিন্তু বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনসহ বর্তমানে যে নতুন আইন হচ্ছে, আইনের পর্যালোচনা হচ্ছে সেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। সরকারের জাতীয় আইনগত সহায়তা কার্যক্রমে এই নারীদের জন্য কোনো অনুবাদক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
চাকমা সার্কেলের রানি ইয়ান ইয়ান বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) বলা হয়েছে, কেউ পিছিয়ে থাকবে না। যারা পিছিয়ে আছে, তাদের প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নৃগোষ্ঠীর নারীদের নিয়ে তেমন কোনো কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি।