>আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কাদের সুস্থ বলা যাবে এবং হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন—এ সংক্রান্ত একটি নতুন গাইডলাইন তৈরি।
দেশে করোনাভাইরাসে (কে) আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১ হাজার ৬৩ জন হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই 'সুস্থ' হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৮৮৬ জন। যদিও আগের দিন রোববার পর্যন্ত ৫৬ দিনে মোট সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭৭। সুস্থতার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনায় হঠাৎ করে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সুস্থ রোগীর সংখ্যা পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে জানানো হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কাদের সুস্থ বলা যাবে এবং হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন—এ সংক্রান্ত একটি নতুন গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। এর আলোকে সুস্থদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মোট হাসপাতাল ছেড়েছেন ১ হাজার ৬৩ জন। তবে নতুন ওই গাইডলাইনে কী আছে, তা বুলেটিনে স্পষ্ট করা হয়নি।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, পরপর তিন দিন লক্ষণ না দেখা গেলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুরোপুরি সুস্থ বা করোনামুক্ত বলা যাবে না।
গতকাল সংবাদ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এই সময়ে ৫ হাজার ৩৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে ৬৬৫ জনের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলো ৯ হাজার ৪৫৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় এক কিশোরসহ দুজন মারা গেছেন। তাঁদের একজন রংপুরের ও অন্যজন নারায়ণগঞ্জের। একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। অন্যজন ষাটোর্ধ্ব। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৭।
কোথায় কতজন হাসপাতাল ছেড়েছেন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা গতকাল সংবাদ বুলেটিনে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি একটি নতুন গাইডলাইন করেছে। এতে কীভাবে একজন রোগীকে সুস্থ বলা যাবে বা হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন, তার ক্রাইটেরিয়া ঠিক করা হয়েছে। এই ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১ হাজার ৬৩ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে হাসপাতালগুলো থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬২৪ জন। ঢাকা বিভাগের অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৭২ জন। চট্টগ্রাম বিভাগের হাসপাতালগুলো থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ জন, খুলনা বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ২৯ জন, সিলেটে ২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩১ জন এবং রংপুর বিভাগে ২৫ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ছাড়া পেয়েছেন কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল থেকে—২৯৮ জন। এ ছাড়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ২১৩ জন, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল থেকে ৮ জন, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল থেকে ৩৮ জন, রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে ১৫ জন, সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল থেকে ২২ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল থেকে ২৬ জন এবং মিরপুর লালকুঠি হাসপাতাল থেকে ৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
তবে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে কতজন সুস্থ হয়েছেন, তার হিসাব দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, আক্রান্ত রোগীদের চার ভাগের তিন ভাগই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল ছাড়া সবাই কি করোনামুক্ত?
নতুন গাইডলাইনে কী আছে, তার বিস্তারিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে বলা হয়নি। করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত সরকারি বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয় একটি সরকারি ওয়েবসাইটে (করোনা ডট জিওবি ডট বিডি)। সেখানে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা–সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন গাইডলাইন ও নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাতে 'কোভিড-১৯ ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন ভার্সন-৫' শিরোনামে যে গাইডলাইন রয়েছে, তা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। অবশ্য এই গাইডলাইনের চতুর্থ ভার্সনেও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশনা আছে। তাতে টানা তিন দিন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার উন্নতি হলে দুটি পরীক্ষাসহ কিছু শর্তে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলা আছে।
ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য এম এ ফয়েজ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আগের গাইডলাইন অনুযায়ী কারও মধ্যে যদি করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হতো তাহলে তার ১৪-২১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পরীক্ষা করা হতো। সেখানে ফলাফল নেগেটিভ এলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অথবা দুই–তিন দিনের মধ্যে আরেকটি পরীক্ষা করা হতো। সেখানেও ফলাফল নেগেটিভ এলে রোগীকে সুস্থ ঘোষণা করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতো। একই সঙ্গে বলা হতো তাঁরা যেন আরও ১৪ দিন বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকেন। তবে নতুন নিয়মে রোগী যদি ক্লিনিক্যালি সুস্থ হয়ে ওঠেন অর্থাৎ পরপর তিন দিন যদি তাঁর আর জ্বর না থাকে, কাশি বা শ্বাসকষ্ট না হয় তাহলে তাঁকে হাসপাতালে না রেখে বাড়িতে ১৪ দিনের আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বাড়ি থেকেই তার পরবর্তী দুটো পরীক্ষা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এম এ ফায়েজ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়গুলো আগেও গাইডলাইনে ছিল। এ হিসাবে হয়তো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এটা বলেছে।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় মূলত এই পথ নেওয়া হয়েছে। তবে রোগীদের হাসপাতালের ছাড়পত্র দিলেও পরপর দুটি আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত সুস্থ বলা যাবে না। লক্ষণ–উপসর্গ না থাকলেও শরীরে করোনাভাইরাস রয়ে গেলে তা থেকে অন্যরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, লক্ষণ–উপসর্গ না থাকলে তাঁদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে। তাঁরা আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন) থাকবে। লক্ষণ না থাকলেও তাঁরা করোনামুক্ত, এটা বলা যাবে না। অনেকের বিশেষত দরিদ্রদের আইসোলেশনে যাওয়ার মতো সুযোগ নেই। তাহলে তাঁরা কোথায় যাবেন? এতে সংক্রমণ বাড়বে কি না, সেটা ভাবতে হবে।