কেউ এসেছেন লাঠিতে ভর করে, কেউ অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে। ষাটের দশকে রাজপথ কাঁপানো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী তাঁরা। আড্ডা, স্মৃতিচারণা, রাজপথের পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে গল্প করে সময় কাটিয়েছেন তাঁরা। ফিরে যান সেই সোনালি অতীতে, যে অতীত গৌরবের, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ষাটের দশকের ‘সংসপ্তক’ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী পুনর্মিলনী-২০১৬-এর আয়োজন আবার এক করে রাজপথের পুরোনো বন্ধুদের। পুরো অনুষ্ঠান ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ষাটের দশকের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামা। ছাত্রলীগের পতাকা উত্তোলন করেন ১৯৬৯ সালের চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল।
উদ্বোধনের পর এম রেজাউল করিম চৌধুরীর ছাত্রলীগ: ষাটের দশকে চট্টগ্রাম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও বইয়ের ওপর আলোচনা করা হয়। বইয়ে ২৯১ জন ছাত্রলীগ নেতার ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত স্থান পায়। বইয়ে ছাত্রলীগের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর নামকরণ, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। শেষ পর্বে ছিল স্মৃতিচারণা। অনুষ্ঠানে ‘আগুনঝরা’ ষাটের দশকের ছাত্রলীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহম্মেদ, নুরুল আলম চৌধুরী, এস এম ইউসুফ, নুরুন্নবী, রেজাউল হক চৌধুরী, মারুফ শাহ, জাফরুল আলম খান, গোলাম রব্বানী, জাফর উল্লাহ, মাহফুজুর রহমান, জসিম উদ্দিন, আশরাফ খান প্রমুখ অংশ নেন।
গতকালের স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাঁর নির্দেশ পালন, পাড়া-মহল্লায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলা, বাষট্টি সালে শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামা ষাটের দশককে ছাত্রলীগের স্বর্ণযুগ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় পাকিস্তানি শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঘরে ঘরে পাড়ায় পাড়ায় ঐক্য গড়ে তুলেছিল। বাঙালির মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও বিকশিত করার দায়িত্ব পালন করেছিল ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা পাই স্বাধীন দেশ ও পতাকা।’
ষাটের দশকের আরেক ছাত্রলীগ নেতা ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহম্মেদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজনকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘ষাট ও সত্তরের দশকে অনেককে রাজপথে দেখেছি। এই অনুষ্ঠানের কারণে তাঁদের অনেককে ৩০-৪০ বছর পর আজ আবার দেখছি।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রগতিশীল শক্তির পিছু হটার সুযোগ নেই। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকেও ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তাই সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক ধারায় গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত দেশ গড়তে হবে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। কিন্তু হাইব্রিড নেতাদের রমরমা অবস্থা চলছে। সময় এসেছে দল থেকে হাইব্রিডদের বিতাড়িত করার।’