তরমুজ

যেভাবে হাত ঘুরে ১৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি

তরমুজ খালাস করতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। সোমবার বরিশাল নগরের পোর্ট রোড নদীবন্দরে
ছবি: সাইয়ান

চাষিরা খেত থেকে ১৬ থেকে সর্বোচ্চ ২১ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করেন। সেই তরমুজ চার হাত ঘুরে খুচরা বাজারে এসে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কেজি নয়, গোটা (পিস) হিসাবে তরমুজ বিক্রির নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু আদতে তাতে লাভ হচ্ছে না ক্রেতাদের। খুচরা বিক্রেতারা আগেভাগেই ওজন আন্দাজ করে দাম নির্ধারণ করে রাখেন।

গত বুধবার বরিশাল শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ কেজি ওজনের একটি তরমুজ আড়াই শ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না। চৌমাথা বাজারে একজন ক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘গোটা আর কেজি যা-ই কেনেন, যেই লাউ সেই কদু। ক্রেতার লাভ নাই।’

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় তরমুজপ্রতি দাম বেড়ে যাচ্ছে। আগে ঢাকায় ট্রাকভাড়া ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এবার তা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার, পাবনায় ২৩-২৪ হাজারের স্থলে ৩৫-৩৭ হাজার, কুমিল্লায় ২২-২৩ হাজারের স্থলে ৩৫-৪০ হাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৮ থেকে ৩০ হাজারের স্থলে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার এবং নোয়াখালীতে ১৫ থেকে ১৮ হাজারের স্থলে ২৮-৩০ হাজার টাকা ট্রাকভাড়া। এ কারণে তরমুজের দাম বেশি পড়ে যায়।

লাভ কৃষকেরও খুব একটা থাকে না। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পখিয়ার চর এলাকার চাষি আবুল হোসেন হাওলাদার এবার তিন একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছিলেন। ৪৮ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার পুরো খেত তিনি ঠিকা হিসেবে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। পাবনার পাইকার সোহেল রানা সেই তরমুজ কিনেছেন। সেই হিসেবে প্রতি কেজি তরমুজের দাম পড়েছে ১৬ টাকা। আবুল হোসেনের এই তরমুজ বরিশালে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।

আবুল হোসেনের তরমুজ কেনা পাবনার পাইকার সোহেল রানার দাবি, এই তরমুজ পাবনা নিয়ে যাওয়ার জন্য ৭০ হাজার টাকায় দুটি ট্রাক ভাড়া করেছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে প্রায় দুই টাকা পরিবহন ব্যয় হবে। এরপর পথখরচ, আড়তদারি সব মিলিয়ে লাভ থাকে সামান্যই। তাঁর দাবি, পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাঁরাও এবার তেমন লাভ করতে পারছেন না। লাভের গুড় খেয়ে ফেলছে আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা।

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এবং বাজার ঘুরে জানা যায়, কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারেরা ‘খেত মূলে’ কিনে পাইকারি মোকামে এনে এক ধাপ লাভে বিক্রি করেন। আবার পাইকারি মোকাম থেকে আরেক ধাপ লাভে ‘শ মূলে’ খুচরা ব্যবসায়ীরা কেনেন। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা আবার ভোক্তা পর্যায়ে তা আরেক দফা লাভে ‘কেজি দরে’ বেচেন। ফলে কয়েক হাত ঘুরে এই তরমুজের দাম এলাকাভেদে তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যায়।

বিষয়টি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রশাসন এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেখভাল করে। বাজার যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য আমরা তাঁদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক তাওফিকুল আলম

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় তরমুজপ্রতি দাম বেড়ে যাচ্ছে। আগে ঢাকায় ট্রাকভাড়া ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এবার তা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার, পাবনায় ২৩-২৪ হাজারের স্থলে ৩৫-৩৭ হাজার, কুমিল্লায় ২২-২৩ হাজারের স্থলে ৩৫-৪০ হাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৮ থেকে ৩০ হাজারের স্থলে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার এবং নোয়াখালীতে ১৫ থেকে ১৮ হাজারের স্থলে ২৮-৩০ হাজার টাকা ট্রাকভাড়া। এ কারণে তরমুজের দাম বেশি পড়ে যায়।

খুচরা বাজারে তরমুজের বেশি দামের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক তাওফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রশাসন এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেখভাল করে। বাজার যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য আমরা তাঁদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখি।’