বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পাবে। দুই ধাপে তিন বছর করে বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি পাবে।
আজ বুধবার সকালে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন তাঁর বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গতকাল মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর স্বার্থে তিনি পরিবেশের উন্নতির তাগিদ দিয়েছেন।
রবার্ট ডিকসন বলেন, ‘বিশেষ করে উচ্চমানের সেবা খাতসহ যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ বাড়ছে। রপ্তানিভিত্তিক বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার অংশ হিসেবে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলেও দুই ধাপে তিন বছর করে যুক্তরাজ্যের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাবে। প্রথম ধাপে ২০২৪ সাল আর দ্বিতীয় ধাপে ২০২৭ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা পাবে। তার মানে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য এ সময় পর্যন্ত শুল্ক আর কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এরপর কী ঘটবে, সেটা নির্ভর করবে আমাদের জিএসপি নীতিমালা কেমন হবে, তার ওপর। অর্থাৎ আগামী ছয় বছর যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা পেতে থাকবে।’
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার তাঁর দেশে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আরও আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতির ওপর জোর দেন। গতকাল মঙ্গলবার দুই দেশের সংলাপে এ বিষয়গুলো এসেছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান। রবার্ট ডিকসন বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকৃষ্ট স্থান হিসেবে তুলে ধরার স্বার্থে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পদ্ধতিগত অনিশ্চয়তা, চুক্তি বাস্তবায়নের শর্তাবলি এবং দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি করহারের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়াটা জরুরি। আর এসব বিষয় সুরাহার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা হচ্ছে পূর্বশর্ত। কারণ, কিছু চ্যালেঞ্জ যেমন সুনির্দিষ্ট আবার কিছু চ্যালেঞ্জ দীর্ঘমেয়াদি। এ ছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতির জন্য প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে রবার্ট ডিকসন বলেন, বাণিজ্য সংলাপে আন্তরাষ্ট্রীয় উচ্চশিক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের অন্তত নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। কারণ, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বড় বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে। কারিগরি, বিজ্ঞানভিত্তিক ও পেশাগত ব্যবস্থাপনা কাজের জন্য বিশেষায়িত যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশে এসে শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার মতো সাফল্য নিশ্চিত করতে চায়। তারা এখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করবে।
রবার্ট ডিকসন জানান, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ৩৪০ কোটি পাউন্ড। এর মধ্যে বাংলাদেশ সে দেশে রপ্তানি করেছে ২৮০ কোটি পাউন্ডের পণ্য, আর যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করেছে ৬৩ কোটি পাউন্ডের পণ্য। মূলত যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির অধিকাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। আর বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য।