চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে যা হচ্ছে, তা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর নানা শামসুল হক গাজী। রোববার মুঠোফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাবেক এই স্কুলশিক্ষক বলেন, তাঁর নাতনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এটা গোটা দেশ এখন জানে।
৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসা কয়েক ঘণ্টা ঘিরে রেখে অভিযান চালায় র্যাব। ঘেরাওয়ের মধ্যে পরীমনি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, দিনদুপুরে কে বা কারা তাঁর বাসায় আক্রমণ চালাচ্ছে। তিনি এ সময় পুলিশের সহায়তা চান। অন্যদিকে র্যাব দাবি করে, এই অভিনেত্রীর বাসায় ‘অভিযান’ চালিয়ে তাঁরা বিপুল পরিমাণ মদ ছাড়াও এলএসডি ও আইসের মতো মাদক উদ্ধার করেছেন। পরে র্যাব বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলাও করে। সেই মামলা এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে।
এর আগে গত ১৩ জুন পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এরপর থেকেই পরীমনি ছিলেন আলোচনায়।
র্যাবের করা মামলায় তৃতীয় দফায় রিমান্ড শেষে গতকাল পরীমনিকে আদালতে হাজির করে সিআইডি। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রোববার দিনভর চেষ্টার পরও পরীমনির বিরুদ্ধে করা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে সিআইডি কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে কথা বলা হয় পরীমনির নানা শামসুল হক গাজীর সঙ্গে।
শামসুল হক গাজী বলেন, ‘দেশের আশি ভাগ মানুষ জানে পরীমনিকে হয়রানি করছে। এটা তো আমার কথা না। সবাই তাই বলছে। সবারই একই কথা। অযথা হয়রানি। ষড়যন্ত্র করে তাকে হেনস্তা করছে এটা সবাই বলছে।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেছেন, তারা তাদের মতো কাজ করে যাচ্ছে। আইনজীবীর সঙ্গে পরীমনিকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। এতে তাঁর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এত দিনে মাত্র একবার নাতনির সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন বলে জানান শামসুল হক গাজী। প্রথম যেদিন পরীমনিকে আদালতে হাজির করা হয়, সেদিন তিনিও আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। পরীমনি তাঁকে বলেছেন, ‘নানুভাই তুমি কোনো দুশ্চিন্তা কোরো না। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করো।’ নিজের বিষয়ে পরীমনি কিছুই বলেননি।
পরীমনির কষ্ট হলেও নানার কাছে লুকাবেন, কারণ তিনি সব সময় নানার সুস্থতার কথা চিন্তা করেন—এমন ধারণা শামসুল হক গাজীর। কারাগার থেকে ফোনে কথা বলার সুযোগ আছে এ বিষয়টি শামসুল হক গাজীর জানা। তবে এখনো পর্যন্ত নাতনির ফোন আসেনি। তিনি আছেন অপেক্ষায়।
আড়াই বছর বয়সে মা হারানোর পর থেকে পরীমনিকে কোলেপিঠে করে বড় করেছেন এই নানা। ২০১৭ সালের ১৮ জুন বাবা দিবসে পরীমনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, শামসুল হক গাজী তাঁকে জন্ম দেননি, তবে তিনিই তাঁর বাবা। পরীমনি লেখেন, ‘আজ সত্যি যদি বলি আমার বাবা হলেন আমার নানুভাই শামসুল হক গাজী। ওহ একটা মজার বিষয় বলি, অনেকেরই আমার নাম নিয়ে কৌতূহল দেখেছি। আসল নাম, ডাকনাম, কে রেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি...আমার সার্টিফিকেট নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। শামসুন মানে সূর্যের আলো। নানুভাইয়ের নামের সাথে মিল করে এই নাম।’
শামসুল হক গাজী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে একদিকে পৃথিবী আরেক দিকে পরী। ও–ই আমার পৃথিবী।’ তিনি বলেন, তাঁর নাতনি উপার্জন করেছেন, কিন্তু সবটাই ব্যয় করেছেন ‘জনহিতকর কাজে’। প্রতিবছর এফডিসিতে দুস্থ শিল্পীদের জন্য কোরবানি দেন পরীমনি। অনাথাশ্রমে জন্মদিন পালন করেছেন। নিজের ঘরবাড়ি নেই। তিনি থাকতেন ভাড়া বাসায়। আর কিছুদিন পরপর নানাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতেন। এবার নানা এসেছিলেন ২১ রমজানে। পরীমনি ঝামেলায় পড়ায় আর পিরোজপুরের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। পরীমনি নেই, তাই ঘর নীরব। তিনি তাঁর নাতনির ঘরে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। এই মুহূর্তে প্রার্থনা করা ছাড়া তাঁর আর কিছুই করার নেই।