সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম

যানজট নিরসনে সংসদীয় কমিটির ১৮ দফা সুপারিশ

রাজধানীর যানজট নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক গঠিত সাব-কমিটি ১৮ দফা সুপারিশ করেছে। ভিআইপিদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ, গাড়ি পার্কিংয়ে নতুন আইন প্রণয়ন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর, রাস্তা সম্প্রসারণ ও বিকল্প রাস্তা নির্মাণ, ক্রসিং বন্ধ করতে ইউ আকৃতির গাড়ি পারাপার সেতু (ইউলুপ) নির্মাণ এর মধ্যে অন্যতম।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে সরকারের একাধিক সংস্থা, কর্তৃপক্ষ যানজট কমাতে নানান সুপারিশ করলেও অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজটের মতো জটিল বিষয় নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো সমন্বিত কর্তৃপক্ষ না থাকায় অধিকাংশ সুপারিশ বাস্তবে কার্যকর হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘ঢাকা শহরের যানজট সমস্যার কারণ ও প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান’ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১৫ সালে ৩ সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করে। কমিটি প্রায় পৌনে দুই বছর অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। গত ডিসেম্বরে প্রতিবেদনটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তুলে ধরা হয়।

সাব-কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি), ট্রাফিক পুলিশ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), এলজিইডি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

কমিটি তার প্রতিবেদনে রাজধানীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রাস্তার ক্রসিং বা মোড় এবং ইউটার্নগুলোকে চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদনে ক্রসিংগুলো বন্ধ করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিএমপি ও অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক ভূমিতে এবং ভূমির ওপরে ইউলুপ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা শহরের বিশৃঙ্খল গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রতিবেদনে একাধিক সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে পরিবেশের ক্ষতি না করে মাটির নিচে বহুতল পার্কিং নির্মাণ অন্যতম। মোহামেডান ক্লাব-সংলগ্ন মাঠ, জীবন বীমার সামনের রাস্তা ও পার্কের নিচে, গুলিস্তান পার্ক, ওসমানী উদ্যান, কলাবাগান মাঠ-সংলগ্ন পার্ক, গুলশান ১-এর ডিএনসিসি মার্কেট, বনানীর একাধিক মাঠের ওপরের স্থাপনা ঠিক রেখে মাটির নিচে পার্কিং নির্মাণের সুপারিশ করেছে কমিটি।

ঢাকা শহরের আয়তন ও যানবাহন বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রয়োজনীয় রাস্তা সম্প্রসারণ, পূর্বাচলের ৩০০ ফুট রাস্তা থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত বিকল্প রাস্তা নির্মাণ, মহাখালী এলাকার যানজট নিরসনের জন্য মহাখালী উড়ালসড়কের সঙ্গে একটি লুপ নির্মাণ করে মহাখালী বাস টার্মিনাল অতিক্রম করিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

প্রতিবেদনের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, লালমাটিয়া ও উত্তরায় অবস্থিত স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা; গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার আবাসিক ভবন থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া। ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের উচ্চ হারে জরিমানা বৃদ্ধি করা, ভিআইপি এবং তাদের নাম বা গাড়ি ব্যবহারকারীদের গাড়ি কোনোভাবেই উল্টো পথে চলতে না দেওয়া।

এসব সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও নগরবিদ ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার মতো কোনো সমন্বয়ক সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। যানজট নিরসনে নেওয়া উদ্যোগ তদারকির ক্ষমতাও কাউকে দেওয়া হয়নি। একটি সমন্বিত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন, যে সংস্থা যানজট নিরসনের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।