হাতিরঝিলের চক্রাকার বাসের যাত্রীছাউনিগুলো রোদে ছায়া দেয় না, বৃষ্টি থেকেও রক্ষা করে না। হালকা বৃষ্টি নামলেই গা বাঁচাতে হুড়োহুড়ি শুরু করেন অপেক্ষমাণ যাত্রীরা। আর ঝড় হলে তো কথাই নেই। এর মধ্যে আবার গত সপ্তাহের শনিবারের ঝড়ে তিনটির ছাউনি উড়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতিরঝিল প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আড়াই বছর আগে এখানে সবুজ রঙের ১০টি যাত্রীছাউনি স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলোর উচ্চতা ৯ ফুট, প্রস্থ ৫ ফুট। যাত্রীদের ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৮টি বসার আসন, দুই পাশে ২টি টিকিট কাউন্টার ও মাঝখানে বিজ্ঞাপনের স্ট্যান্ডযুক্ত এই ছাউনিগুলো চীন থেকে আমদানি করা। একেকটির দাম পড়েছে সাড়েছে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা।
গত বুধবার হাতিরঝিলে চক্রাকার বাসের যাত্রীছাউনিগুলো ঘুরে দেখা যায়, দুই পাশে টিকিট কাউন্টার আর মাঝখানে তিনটি কাচ দিয়ে ঘেরা বিজ্ঞাপনের স্ট্যান্ড, তবে সেগুলো এখনো ভাড়া দেওয়া হয়নি। অব্যবহৃত স্ট্যান্ডগুলোতে পানি ঢুকে মরিচা ধরে গেছে।
টিকিট কাউন্টারগুলোও ব্যবহার হয় না। চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে ছোট ও পুরোনো টিনের কাউন্টারগুলোতেই টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহের ঝড়ে রামপুরা, মহানগর, মধুবাগ ও পুলিশ প্লাজার সামনের নতুন যাত্রীছাউনির ছাউনি আধাআধি উড়ে যায়। মেরামতের জন্য পুরো ছাউনি খুলে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মগবাজার মোড়ের যাত্রীছাউনি ও কাউন্টারটির ব্যবহারই শুরু হয়নি।
রামপুরা অংশের যাত্রীছাউনিতে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ নুসরাত খন্দকার বলেন, ‘ছাউনির নিচে দুই পাশে মাত্র ৭টি আসন, কিন্তু যাত্রী থাকে অনেক বেশি। তাই সবার সুযোগ থাকে না। ছাউনি অনেক উঁচু থাকায় রোদ বা বৃষ্টির ছাঁট আটকায় না। ছাউনির তলাতেও ছাতা মাথায় দাঁড়াতে হয়।’
‘সকালে পূর্ব দিকে রোদ উঠলে ছাউনি কাজে লাগে না। দুপুরেও রোদ মাথায় লাগে। কেবল বিকেলে সূর্য হেলে পড়লে একটু ছায়া যাওয়া যায়। ছাউনিগুলো এত উঁচু যে রোদ-বৃষ্টি কোনো ক্ষেত্রেই তেমন কাজে আসে না’, বলছিলেন অপেক্ষমাণ যাত্রী আনোয়ার হোসেন।
মেরুল বাড্ডা যাত্রীছাউনির লাইনম্যান (তত্ত্বাবধায়ক) মো. জহির বলেন, ‘যাত্রীদের সুবিধার জন্য এগুলো বসানো হলেও প্রকৃতপক্ষে যাত্রীদের কোনো কাজে লাগে না। রোদ হলে ওপরের ছাদের তাপে বসে থাকা যাত্রীদের আরও কষ্ট হয়।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ছাউনিগুলো ফুটপাতের ওপর তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে বেশি প্রশস্ত করা যায়নি। তা ছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি যাত্রীছাউনিগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুযায়ী উপযুক্ত নয়। তবে যেসব সমস্যা এখন হচ্ছে তা সমাধানের কাজ করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি সরিয়ে দিতে ‘ড্রপ ওয়াল’ তৈরি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ছাউনিগুলোতে অপেক্ষমাণ ব্যক্তিদের বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচাতে ছাউনির প্রশস্ততা আরও আড়াই ফুট বাড়িয়ে নিচের দিকেও নামিয়ে দেওয়া হবে।