দিনাজপুর শহরে হঠাৎ করেই বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব। এতে অতিষ্ঠ পথচারী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী। এমনকি এসব কুকুরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গবাদিপশুও। হাসপাতালেও বাড়ছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু।
শহর ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, কলেজ মোড়, সুইহারি, বাহাদুর বাজার, রামনগর মোড়, উপশহর, ন্যাকার মোড়, ষষ্ঠীতলা, উঁচার মোড় এলাকায় কুকুরের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে সুইহারি, উঁচার মোড় ও বাহাদুর বাজার এলাকায় দল বেঁধে ১০–১২টি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সন্ধ্যা নামলেই কুকুরের উপদ্রব বাড়ছে। পথচারীদের গতিরোধ করে দাঁড়াচ্ছে কুকুরের দল।
গতকাল দিনাজপুর সদর হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত মুখমণ্ডল নিয়ে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছে ৩ বছরের শিশু বিপ্লব। তার বাড়ি শহরের পুলহাট এলাকায়। পাশের বেডেই কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে শুয়ে আছে শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকার ইবরান (১০)।
শিশু বিপ্লবের মা জানালেন, গত শুক্রবার দুপুরে ভাত খেয়ে বাড়ির বাইরে অন্য ছেলেদের সঙ্গে খেলছিল বিপ্লব। হঠাৎ ৪–৫টা কুকুর একটা মুরগিকে ধাওয়া করে। মুরগিটি পালিয়ে যায় তবে একটি কুকুর বিপ্লবের মুখে খামচে ধরে। তার নিচের ঠোঁটে মারাত্মকভাবে আঁচড় কাটে কুকুরটি। সেই সঙ্গে বাঁ হাতের বাহুর ওপরের অংশ খামচে মাংস তুলে ফেলে।
একই কথা বলেন ইবরানের মা বিলকিস আরা বেগম। তিনি জানান, বাড়ির পাশে বাগানে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল ইবরান। এ সময় কয়েকটি কুকুর আক্রমণ করে তাদের ওপর। অন্যরা পালিয়ে গেলেও পালাতে পারেনি ইবরান। দুটি কুকুর তার দুই পায়ে কামড়ে ভীষণভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে।
বালুবাড়ি এলাকার খুরশিদ জাহান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মেয়ে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল, হঠাৎ কতগুলো কুকুর ধাওয়া করে। কোনোমতে দৌড়ে মেয়ে আমার পাশের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে থাকি।’
দিনাজপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক আহাদ আলী জানালেন, গত আগস্ট মাস থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এই হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ৮৬৯ জন চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। তবে দুই সপ্তাহ ধরে কুকুরে কামড়ানো আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানালেন তিনি। রেজিস্টার দেখে জানালেন, দুই সপ্তাহ ধরে এই হাসপাতালে গড়ে ২৫ জনের বেশি ব্যক্তি কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। জানালেন এখনো কারও জলাতঙ্ক হয়নি। সদর হাসপাতাল থেকে সব ধরনের টিকা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এআরভি ও আরআইজি ভ্যাকসিনও মজুত আছে। তিনি বলেন, শুধু অক্টোবর মাসেই কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ১ হাজার ৯০৪ জনকে বিভিন্ন ধাপে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে।
শহরে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, প্রতিবছর পৌর কর্তৃপক্ষ কুকুর নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করত। কিন্তু কুকুর নিধন চালানো বন্ধে হাইকোর্টের রিটের কারণে ২০১৮ সালের শুরু থেকে তা বন্ধ আছে। ওই বছরে ১ লাখ টাকার টিকা পৌরসভায় এসেছিল। পরে ভ্যাকসিন বাবদ কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এখন কুকুরের ‘ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচিও’ বন্ধ রয়েছে।
পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী হাসানুজ্জামান রেজিস্টার দেখে বলেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে কুকুর নিধন করা হয়েছিল ২ হাজার ৪০০টি এবং ২০১৮ সালে কুকুর নিধন করা হয় ২৫০টি।