আউশ আবাদের জন্য সরকারিভাবে কৃষকদের কিছু সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। ফলে আউশ ধান খুব ভালো হয়েছে। কৃষক প্রতি হেক্টরে প্রায় পাঁচ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন পাচ্ছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জেলায় এবার যশোরে আউশের ফলন ভালো হয়েছে। আউশের ভালো ফলনে বেজায় খুশি জেলার আউশ চাষিরা। জেলার বেশিরভাগ এলাকায় এখন চলছে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। আইশ ধান চাষের কয়েকটি ইতিবাচক দিক সম্পর্কে কয়েকজন চাষি বলেন, আউশ ধান চাষে খরচ কম। সরকারি কিছু সহায়তা পাওয়া গেছে। বাজারে ধানের দাম ভালো। এ কারণে তাঁরা এবার আউশ ধান চাষে ঝুঁকেছেন। সামগ্রিক আবহাওয়া এবার আউশ ধানচাষের অনুকূলে ছিল। মৌসুম জুড়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, গত মৌসুমে জেলায় ১২ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল। এবার চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গত মৌসুমের চেয়ে এবার চার হাজার ২২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ৪৮০ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় তিন হাজার ২৭০ হেক্টর, ঝিকরগাছায় দুই হাজার ৫০০ হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় দুই হাজার ৬০০ হেক্টর, মনিরামপুর উপজেলায় চার হাজার ৪৮০ হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় এক হাজার ২২০ হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ৬৬৫ হেক্টর এবং কেশবপুর উপজেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। এবার আউশে বিআর-২৬, ব্রিধান-২৮,৪৮, ৫০,৫৫, ৫৮,৬৩, ৮২ ও ৮৩, বিণাধান-১৯, মিনিকেট, রহিম স্বর্ণ, শুভলতা, গণতারা, জিএস ওয়ান ও জামাইবাবু এবং হাইব্রিড ইস্পাহানি, সিনজেন্টা, ১২০৬, তেজগোল্ড, এসএলএইটএইচ, হীরা এবং অ্যাগ্রোধান-১৪ জাতের ধানের চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এবার জেলার পাঁচ হাজার ৫০০ জন কৃষককে আউশ চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক কৃষক পাঁচ কেজি করে বীজধান, ২০ কেজি করে ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) এবং ১০ কেজি করে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার পেয়েছেন।
সম্প্রতি যশোরের শার্শা, চৌগাছা এবং অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও ধানগাছ থেকে শীষ বের হচ্ছে। আবার কোথাও ধান পাকতে শুরু করেছে। কোথাও আবার আউশ চাষিরা ধান কাটা, ধানের আঁটি বাঁধা এবং ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত। বৃষ্টিতে ধান ভিজে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য অনেক কৃষক খেতের পাশে উঁচু জায়গায় ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
অভয়নগর উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের আউশ চাষি ওহাব গাজী এবার এক বিঘা (৪৮ শতকের বিঘা) জমিতে ব্রি-৪৮ জাতের আউশ ধানের চাষ করেছেন। তিনি ধান মাড়াই করে ২০ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আউশ ধানে খরচ বোরো ধানের প্রায় অর্ধেক। এবার আবহাওয়া খুব ভালো ছিল। কৃষি অফিস থেকে কিছু সহায়তাও পেয়েছি। ধানের এবার ভালো ফলন হয়েছে। আমি এবার ২০ মণ ধান পেয়েছি।’
শার্শা উপজেলার কাগজপুকুর গ্রামের আউশ চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আউশ ধানে খরচ কম। এবার আমি দুই বিঘা (৩৩ শতকের বিঘা) জমিতে মিনিকেট জাতের চাষ করেছি। ধান ভালো হয়েছে। ধান পাকতে শুরু করেছে। এবার আমি ৩৫ থেকে ৩৮ মণ ধান পাবো।’ চৌগাছা উপজেলার বর্ণী গ্রামের কৃষক আব্দুল বারিক বলেন, ‘আমি এবার তিন বিঘা পাঁচ কাঠা (৩৩ শতকে বিঘা) জমিতে রহিম স্বর্ণ জাতের ধানের চাষ করেছি। সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। ধান খুব ভালো হয়েছে। এখন ধানের শীষ বের হচ্ছে। এবার ৭০ মণের উপরে ধান পাবো।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এবার ধানের দাম ভালো। তা ছাড়া আউশ ধানচাষে খরচ কম। এজন্য জেলায় এবার প্রায় চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন,‘, ‘আউশ মৌসুমে এবার আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। মৌসুমজুড়ে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে। জেলার আউশ চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক সময়ে আউশ ধান রোপন ও বপনের কাজ করেছেন। সরকারিভাবে তাঁদের কিছু সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। ফলে আউশ ধান খুব ভালো হয়েছে। কৃষক ব্রি-৪৮ এবং বিণাধান-১৯ হেক্টরে প্রায় পাঁচ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন পাচ্ছেন।’