যমুনায় বিলীন বিদ্যালয়, মাঠে চলছে পাঠদান

মাঠে চলছে পাঠদান
মাঠে চলছে পাঠদান

পাবনার বেড়া উপজেলার দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের কবলে পড়ে যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। এতে বিদ্যালয়টির ৪৭৫ জন শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা স্থানীয় একটি মক্তবের মাঠে খোলা আকাশের নিচে গত শনিবার থেকে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছেন। তবে রোদের প্রখরতা ও সংকীর্ণ স্থানের কারণে সেখানে ঠিকমতো পাঠদান করানো যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী ছয়-সাতজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনার চরে পাশাপাশি অবস্থিত বেড়া উপজেলার দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা ও শাহজাদপুর উপজেলার চরপাইখন্দ গ্রামে মাস তিনেক আগে নদীভাঙন শুরু হয়। প্রথম দফায় চরপাইখন্দ গ্রামটি পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর বন্যায় আশপাশের এলাকা তলিয়ে গেলে ভাঙন কিছুটা স্তিমিত হয়। কিন্তু পানি কমা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা আবারও বাড়তে থাকে। ১৫ দিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই ১৫ দিনে দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের দেড় হাজার বিঘা ফসলের জমি ও অর্ধশতাধিক বাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শনিবার পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। বিলীন হওয়ার আগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র, স্কুলঘরের চাল ও বেড়ার টিন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের সম্মুখে থাকা দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের বাড়িগুলো থেকে ঘর ও গৃহস্থালি জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় একটি মক্তবের সংকীর্ণ মাঠে খোলা আকাশের নিচে দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় একই সঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঠে বসিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। আর মাঠের অন্য পাশে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর (পিএসসি) নির্বাচনী পরীক্ষা।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার বলেন, বিদ্যালয়টিতে দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা, চরনাকালিয়া, ওমরপুর ও চরপাইখন্দ গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। এর মধ্যে চরনাকালিয়া বাদে বাকি তিন গ্রামের বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় গ্রামের লোকজন অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এর ফলে বিদ্যালয়টির অনেক শিক্ষার্থী পরিবারের সঙ্গে অন্যত্র চলে গেছে। এতে পিএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীও কমে গেছে। বিদ্যালয়ের ২৮ জন শিক্ষার্থীর পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা থাকলেও নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মাত্র ১৫ জন। তা ছাড়া ক্লাস শুরু হওয়ার বিষয়টিও অনেক শিক্ষার্থী জানে না। আর খোলা মাঠে ক্লাস নিতে সমস্যা হলেও সামনে বার্ষিক পরীক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে আপাতত এভাবেই ক্লাস চালানো হবে।
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফাঁকা জায়গা দেখে আপাতত একটি অস্থায়ী স্কুলঘর তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বার্ষিক পরীক্ষার জন্য কিছুটা হলেও শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের জায়গা পাওয়া যাবে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘মক্তবের যে খোলা জায়গায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে, সেটিও সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নদীতে হারিয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামটিই এখন বিলীন হওয়ার পথে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে অস্থায়ী স্কুলঘর তৈরি দূরের কথা, পড়াশোনা করানোর মতো শিক্ষার্থীই থাকবে না।’