আল–জাজিরার প্রতিবেদন

‘যদি তথ্য থাকত, সরকার ব্যবস্থা নিত’

সাংবাদিক টিম সেবাস্টিয়ানের উপস্থাপনায় গত বুধবার জার্মানির গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে প্রচারিত টক শো ‘কনফ্লিক্ট জোন’-এ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় ১ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শীর্ষক তথ্যচিত্র নিয়ে কথা বলেছেন গওহর রিজভী। ডয়চে ভেলে বাংলায় প্রকাশিত অংশটুকু তুলে ধরা হলো:

গওহর রিজভী
প্রথম আলো
প্রশ্ন

টিম সেবাস্টিয়ান: আল–জাজিরা চলতি মাসে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে আপনার দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিস্মিত হওয়ার মতো দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর আপনার সরকার ত্বরিত প্রতিক্রিয়ায় ওই তথ্যচিত্রকে মিথ্যা, মানহানিকর ও অপপ্রচার বলে আখ্যা দিয়েছে। অথচ আপনারা প্রথমে তদন্তের কথা ভাবেনওনি। এটা সৎ সরকারের প্রতিক্রিয়া হয়নি, তাই নয় কি?

গওহর রিজভী: তদন্ত চলছে। তদন্ত করা হচ্ছে। আন্তরিকতার সঙ্গে আপনাকে বলতে চাই, তথ্যচিত্রের শিরোনাম ছিল ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’। আর আমাদের বলা হলো যে এতে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে হওয়া দুর্নীতি প্রকাশ করা হবে। আপনি কি আসলেই বিশ্বাস করেন যে এই তথ্যচিত্রে তা করা হয়েছে? সেখানে কি এমন একটি প্রমাণও আনতে পেরেছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা যায়? সে কারণে আমি মনে করি, সচেতন একাডেমিক ও সাংবাদিক হিসেবে আমাদের পেছনে ফিরে তাকিয়ে নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকার কী প্রমাণ দেওয়া হয়েছে? তারপরও এই তথ্যচিত্রে শাসনব্যবস্থা কত দুর্নীতিগ্রস্ত, তা দেখানো হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

প্রশ্ন

টিম সেবাস্টিয়ান: তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে যে আল-জাজিরা হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দুজন পলাতক আসামির অবস্থান নির্ণয়ে সক্ষম হয়েছে। দুই আসামির ভাই আপনাদের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এটা আপনাদের জন্য বড় অস্বস্তির, তাই নয় কি?

গওহর রিজভী: অবশ্যই। কিন্তু অন্যদিকে আবার বলছি, আমি সবকিছু ডিফেন্ড করতে যাচ্ছি না। তবে আপনি যেভাবে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, তাতে মনে হয় এটা প্রয়োজনীয়। একজন মানুষকে কি তার ভাইয়ের অপরাধ দিয়ে বিচার করা উচিত? আমার মনে হয়, আমাদের এই প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করা উচিত। এখন সেনাবাহিনীতে থাকা ভাইটি যদি তাঁর ভাইদের বিচার এড়াতে সাহায্য করেন, তাহলে এ অভিযোগ খুবই বৈধ হবে। অথচ যা ঘটেছে, তা এই ভদ্রলোক সেনাপ্রধান হওয়ার বহুদিন আগে ঘটেছে।

প্রশ্ন

টিম সেবাস্টিয়ান: ঠিক আছে। তথ্যচিত্রে জেনারেল আজিজের ভাইদের বিষয়ে বিস্তারিত যা দেখানো হয়েছে, তা দেখুন। জেনারেল আজিজের ভাইদের মধ্যে দুজন—আনিস ও হারিস ১৯৯৬ সালের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের এক ব্যক্তিকে হত্যায় অভিযুক্ত হন। তাঁরা দুজনই পালিয়ে যান। আর তাঁদের তৃতীয় ভাই জোসেফও অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং তিনি ১০ বছরের বেশি সময় মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে ছিলেন। তিনি কোন জাদুবলে আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার কিছু আগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান—এটা কীভাবে হলো? এটা কি বাংলাদেশে স্বাভাবিক যে সেখানে রাস্তায় বিরোধীদের ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়?

গওহর রিজভী: মি. সেবাস্টিয়ান, আপনি এমন নিশ্চিত ভাব নিয়ে কথা বলছেন, তা আমাকে অবাক করছে। আপনি সেনাপ্রধানের নিয়োগ ও তাঁর ভাইয়ের মুক্তির বিষয়টি একই সঙ্গে জড়াচ্ছেন। আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই...(এ সময় টিম সেবাস্টিয়ান বলেন, অবশ্যই একই ঘটনা)। না, না, না, না...

প্রশ্ন

টিম সেবাস্টিয়ান: আমার কথা হলো, ঠান্ডা মাথায় হত্যার জন্য ক্ষমা পেতে একটি ভালো যোগাযোগ থাকতে হবে, তাই না?

গওহর রিজভী: আমাকে প্রকৃত তথ্যটা বলতে দিন। আপনি তারপর দয়া করে উপসংহার টানুন। তাঁর যে ভাইকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি প্রায় ২০ বছর কারাগারে ছিলেন। আমাদের দেশে একটা আইন আছে, একটা নির্দিষ্ট সময় কারাভোগের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেতে পারেন। এসব কিছু অনেক আগে ঘটেছে। তাঁর ভাই সেনাপ্রধান হয়েছেন, সেটা আলাদা ঘটনা। এই মানুষটি ৩৫ বছর সশস্ত্র বাহিনীতে ছিলেন, একেবারে ক্লিন রেকর্ড নিয়ে কাজ করেছেন। তাহলে আমরা কেন এ দুটি ঘটনাকে একসঙ্গে জড়াব এবং কুৎসা রটাব? দুই ঘটনার মধ্যে ছয় মাসের পার্থক্য।

প্রশ্ন

টিম সেবাস্টিয়ান: ওকে, ঠিক আছে ড. রিজভী। তথ্যচিত্রে এটাও দেখানো হয়েছে যে আপনাদের সেনাপ্রধান খুব ভালোভাবেই জানতেন যে তাঁর পলাতক দুই ভাই কোথায় আছেন। কিন্তু তিনি তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এটা তদন্ত করার মতো বিষয় নয়?

গওহর রিজভী: এটা তদন্ত করার মতো হবে। কিন্তু আমি যা জানি, আপনিও তাই জানেন—এই দুই ব্যক্তি বাংলাদেশের আওতার বাইরে ছিলেন। এরপরও তাঁদের তথ্য যদি আমাদের কাছে থাকত, তাহলে ওই দুই দেশের সঙ্গে আমাদের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলে আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতাম। আসলে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তা করেছি। এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে আমরা তা করতাম না। সত্যিই সরকারের কাছে যদি এই তথ্য থাকত, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিত।