>*আজ রোববার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে
*যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অনেক সাফল্য আছে
*রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ঘাটতির কথা বলছে ল্যানসেট
*ল্যানসেট-এর বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত নয়
বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ৩ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিল। ওই বছর দেশে যক্ষ্মায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট বলছে, যক্ষ্মা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ঘাটতি আছে।
বাংলাদেশ সরকার যখন যক্ষ্মা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় নিজেদের সাফল্যের কথা প্রচার করছে, ঠিক তখন ল্যানসেট–এ বাংলাদেশ সম্পর্কে এই তথ্য প্রকাশিত হলো। তবে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিষয়ভিত্তিক পরিচালক অধ্যাপক মো. শামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ল্যানসেট–এর বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই। আমরা ল্যানসেট–এর বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাব।’
ল্যানসেট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানের ৭৭ জন গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যক্ষ্মাবিষয়ক একটি কমিশন গঠন করে। ওই কমিশন বৈশ্বিক যক্ষ্মা পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি যক্ষ্মামুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে কিছু সুপারিশ করেছে। কমিশনের প্রতিবেদন প্রবন্ধ আকারে ২০ মার্চ ‘বিল্ডিং এ টিউবারকিউলোসিস-ফ্রি ওয়ার্ল্ড: দ্য ল্যানসেট কমিশন অন টিউবারকিউলোসিস’ শিরোনামে ল্যানসেট অনলাইন সংস্করণে ছাপা হয়েছে।
৫৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে কমিশন বলেছে, বাংলাদেশ, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের সরকারগুলোকে যক্ষ্মা কর্মসূচির অর্থায়ন বৃদ্ধিতে টেকসই নীতিগত কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, রাজস্ব বৃদ্ধিতে তামাকের ওপর কর বাড়াতে হবে এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে।
যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব বেশি এমন ১০টি দেশের তালিকা দিয়ে কমিশন বলেছে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নিম্ন স্তরের। নিম্ন স্তরের প্রতিশ্রুতির অর্থ হচ্ছে, যে দেশ বৈশ্বিকভাবে উচ্চপর্যায়ের কোনো সভায় বা প্রতিষ্ঠানে যক্ষ্মা নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে এই শ্রেণিতে আছে কঙ্গো ও তানজানিয়া। উচ্চ স্তরের প্রতিশ্রুতির দেশের শ্রেণিতে আছে ভারত, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়া। নিম্ন ও উচ্চ শ্রেণির মাঝামাঝি আছে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মোজাম্বিক।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিষয়ভিত্তিক পরিচালক অধ্যাপক মো. শামিউল ইসলাম বলেন, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে ঠিকই। কিন্তু যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যও অনেক। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না থাকলে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হতো না। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবার যক্ষ্মা নিয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশন হয়েছিল। ওই অধিবেশনে বাংলাদেশের যক্ষ্মা কর্মসূচির সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন। এ রকম উদাহরণ আরও আছে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলছেন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসার ২০১৮ সালের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাংলাদেশের অর্জন বেশি। একইভাবে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অর্জন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে দেশ। একইভাবে ওষুধের মাধ্যমে যক্ষ্মা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও কিছুটা পিছিয়ে দেশ।
বাংলাদেশে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনা মূল্যে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়। দেশের প্রতিটি রোগী বিনা মূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ পায়।
আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস
আজ রোববার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। প্রতিবছরের মতো সরকারের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও সহযোগী এনজিওরা দিবসটি পালনের নানা কর্মসূচি নিয়েছে। যক্ষ্মা দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য: ‘এখনই সময় অঙ্গীকার করার, যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার’।
দিবসটি পালন উপলক্ষে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও ব্র্যাক। সংবাদ সম্মেলনে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরার পর বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা অপরিবর্তিত আছে। দেশের ২৬ শতাংশ রোগী জাতীয় কর্মসূচির বাইরে রয়ে গেছে। এগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। শহরাঞ্চলের যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা, জনবল ও আর্থিক স্বল্পতাও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে তারা উল্লেখ করে।