জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপক্ষের অন্য সাক্ষীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। উৎকণ্ঠায় আছেন সাক্ষীরা এবং তাঁদের পরিবার-পরিজন। হামলার ভয়ে কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে রাত যাপন করছেন। এই অবস্থায় সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন সাক্ষীরা।
সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৮ নম্বর সাক্ষী মোস্তফা গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন। সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে হাফিজুল অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা তাঁর বাবার ওপর হামলা করেছে।
পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার পাড়েরহাট রাজলক্ষ্মী হাইস্কুল মাঠে গতকাল জানাজা শেষে হোগলাবুনিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে মোস্তফা হাওলাদারের লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হলে এক হূদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাঁর মেয়ে সোনিয়া আক্তার বলে, ‘সাক্ষী দেওয়াই কি আমার বাবার জন্য কাল হলো? যারা আমাদের এতিম করেছে, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোস্তফা হাওলাদারের ছোট ভাই আ. মজিদ হাওলাদার বলেন, ‘ঘরটা পাকা করলে হয়তো ভাইয়ের (মোস্তফা হাওলাদার) এভাবে মরতে হতো না।’
আতঙ্কে অন্য সাক্ষীরা: মোস্তফা হাওলাদারের জানাজায় এসেছিলেন সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান সাক্ষী মাহাবুবুর রহমানসহ একাধিক সাক্ষী। এ সময় মাহাবুবুর রহমান জানান, গত ২৮ অক্টোবর হরতালকারীরা তাঁর টেংড়াখালীর বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি ঘরের মাচায় পালিয়ে সেযাত্রা রক্ষা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ। সরকারের কাছে এর থেকে মুক্তি চাই। হাজতের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি। যেকোনো সময় আমাকেও হত্যা করা হতে পারে। বাজার-ঘাটে গেলে পুলিশ পাহারায় চলাফেরা করতে হয়।’
সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার ৬ নম্বর সাক্ষী ও পাড়েরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ মামলার ৭ নম্বর সাক্ষী টেংড়াখালী গ্রামের আলতাফ হোসেনের ঘরের অবস্থা ভালো না। মোস্তফা হাওলাদারের ওপর হামলার পর থেকে তিনি রাতে এসে আমার বাড়িতে থাকেন।’
পিরোজপুরের সহকারী পুলিশ সুপার এম এন মোর্শেদ জানান, প্রধান সাক্ষী মাহাবুবুর রহমানের বাড়িতে ছয়জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক মোতায়েন রয়েছে।
অন্য সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে।
সংসার নিয়ে দুশ্চিন্তা: মোস্তফা হাওলাদার স্ত্রী হাসিনা বেগম, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। মেয়ে সোনিয়া অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। হাসিনা বেগম এখন দুই সন্তান নিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা। কীভাবে সংসারের খরচ জোগাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।
জিয়ানগরের পাড়েরহাট বন্দর বাসস্ট্যান্ডে হোটেল চালাতেন মোস্তফা। এখন সেটি বন্ধ।
জিয়ানগরের ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান জানান, মোস্তফা হাওলাদার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা ছয় ব্যক্তিকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোস্তফা হাওলাদারের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।