>শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পূর্বপ্রস্তুতি। অক্টোবরে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের জন্য বিবেচনায় ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে দিল্লি যাবেন। ওই সফরের পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল বুধবার তিন দিনের সফর শেষ করলেন। গতকাল বুধবার সকালে নেপালে গেছেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্ডিয়ান ইকনোমিক সামিটে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের কথা থাকলেও ভারত এটিকে দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে বিবেচনা করছে। সে ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর আগামী অক্টোবরে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীরা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে ৩ ও ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সামিটে অংশ নেবেন। এর পরদিন অর্থাৎ ৫ অক্টোবর তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কিছু বার্তা তুলে ধরেছেন এস জয়শঙ্কর। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কাশ্মীর পরিস্থিতি।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন অবশ্য গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের আলোচনায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসেনি।’
জয়শঙ্কর ঢাকা ছাড়ার আগে অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাশ্মীর প্রসঙ্গে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। যেখানে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে বাংলাদেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় সইয়ের জন্য ১৫ থেকে ১৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বিবেচনায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় ভারতীয় বিনিয়োগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, পাট, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাত রয়েছে। ওই তালিকার মধ্যে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে খুলনা ও মোংলা এসওপির বিষয়টিও যুক্ত।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অক্টোবরে ওই তালিকা থেকে চুক্তি সইয়ের বিষয়ে প্রসঙ্গটি তুলেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবীর গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এস জয়শঙ্করের সফর প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের প্রস্তুতির অংশ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবগুলো বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। তবে এবারের সফরে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছি। তিনি নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসনের কথা বলেছেন। এটা বাংলাদেশেরও বক্তব্য। এর আগে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ভারত স্পষ্টভাবে এমন কথা বলেনি। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের স্বার্থের যুক্ততার কথা বলেছেন, যা তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছি।
কূটনীতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কাশ্মীর প্রসঙ্গটি ওঠা অস্বাভাবিক নয়। সংগত কারণেই ভারত চাইবে নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ তাঁর অবস্থানটা বুঝুক। কোন প্রেক্ষাপটে এবং কেন ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এস জয়শঙ্কর ঢাকায় এসে সেই বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়ে গেছেন।