রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে মোটরসাইকেলের ব্যবহার। বিশেষ করে ঢাকায় বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক সেবায় এখন চলছে মোটরসাইকেল। এতে মানুষের যেমন পরিবহনের ভোগান্তি কমেছে, তেমনি বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও। ন্যাশনাল মোটরসাইকেল ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় জানা গেছে, গাড়ি চালানোর চেয়ে মোটরসাইকেল চালানো ২৭ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। মোটরসাইকেল চালানোর আগে তাই কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা জরুরি। সেগুলো কী? টিভিএস অটো বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (সার্ভিস) অমিত কান্তি পাল দিয়েছেন পরামর্শ।
প্রতিবার যাত্রা শুরু করার আগে হর্ন, লাইট, দিকনির্দেশক সংকেত ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, দেখে নিন। এরপর দেখুন বেল্ট, চেইন ও ব্রেক ঠিক আছে কি না। সর্বশেষ চাকার দিকে খেয়াল করতে হবে। দেখতে হবে সেটি পর্যাপ্ত চাপে ঠিক জায়গায় আছে কি না বা কোনোভাবে খুলে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কি না।
প্রতিটি রাস্তার জন্য গতির সর্বোচ্চ সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। রাস্তা অনুযায়ী নির্ধারিত গতির সীমাও ভিন্ন হয়। এ জন্য আশপাশের সবকিছু দেখে মোটরসাইকেল চালাতে হবে। তবে রাস্তা ফাঁকা থাকলে আপনি ওই রাস্তার সর্বোচ্চ নির্ধারিত গতিতে মোটরসাইকেল চলাতে পারেন।
বৃষ্টিভেজা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানো খুবই বিপজ্জনক। তাই কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে আর তখন যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মোটরসাইকেল না চালিয়ে অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন।
বাইকারের জন্য খুবই জরুরি একটি অনুষঙ্গ হেলমেট। হেলমেট পরা থাকলে মৃত্যুঝুঁকি থেকে বাইকাররা রক্ষা পেতে পারেন। তাই একটু বেশি খরচ হলেও ভালো মানের হেলমেট সব সময় ব্যবহার করুন।
স্যান্ডেল কিংবা শর্টস পরতে আরামদায়ক হলেও মোটরসাইকেল চালানোর সময় এটি খুবই বিপজ্জনক। কারণ, কোনো কারণে যদি আপনি চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান, তবে এ-ধরনের কাপড় আপনাকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই মোটরসাইকেল চালানোর সময় নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে পোশাক নির্বাচন করতে হবে।
রক্ষণাত্মকভাবে মোটরসাইকেল চালালে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ জন্য প্রতিযোগিতা না করে নিয়ম মেনে আশপাশে লক্ষ রেখে মোটরসাইকেল চালাতে হবে। মনে রাখবেন, দুর্ঘটনা এড়াতে গন্তব্যস্থলে একটু দেরিতে পৌঁছানোকে মেনে নেওয়াই যৌক্তিক।
আপনি রাস্তার যেদিকে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন, সেদিকে ভালো করে খেয়াল রাখুন। সামনে বাঁক থাকলে কতটুকু গিয়ে আপনি বাঁক নেবেন,Ñসেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
অ্যান্টিলক ব্রেক আপনার মোটরসাইকেলের ব্রেককে পুরো নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি আপনাকে ব্রেকের কারণে হওয়া দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করবে। তাই মোটরসাইকেল কেনার সময় অ্যান্টিলক ব্রেক লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না।
বাইক নিয়ে রাস্তায় নামলে আপনার সামর্থ্য সম্পর্কে জানুন। সেই রাস্তায় মোটরসাইকেল চালান যে রাস্তা আপনার পরিচিত এবং যেখান দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করেন। তাই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে সিদ্ধান্ত নিন কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন।
রাস্তায় দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। তাই মোটরসাইকেল চালানোর আগে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিন্ত করতে হবে। মনমেজাজ ভালো না থাকলে বাইকার প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাই মোটরসাইকেল চালানোর আগে নিজের মেজাজের বিষয়টি কখনো অবহেলা করবেন না।
ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাফিক আইন মেনে চললে হয়তো আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হবে, কিন্তু সময়ের চেয়ে আপনার জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই সব সময় ট্রাফিক আইন মেনে মোটরসাইকেল চালাতে হবে।