গত মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে যতজন নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মে মাসে ১০৭ জন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। আগের মাসে (এপ্রিল) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৬৩ জন শিক্ষার্থী।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মে মাসের সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি আজ সোমবার প্রকাশ করা হয়।
নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে সারা দেশে ৫২৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছেন ৬৪১ জন। আহত ১ হাজার ৩৬৪ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন গড়ে ২১ জন নিহত হয়েছেন, যা এপ্রিলের তুলনায় ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি।
মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৭৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।
মে মাসে দেশে যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এ মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৭৯ জন।
মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ৮৪ জন। শিশু ৯৭ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৩ দশমিক ৫২ শতাংশ মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। আর দুর্ঘটনায় ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ পথচারী নিহত হন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ সংখ্যা ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। থ্রি-হুইলার ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাস ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
মে মাসে জাতীয় সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যা ৪১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে। গ্রামীণ সড়কে ঘটেছে ১৪ শতাংশ দুর্ঘটনা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তাঁরা নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছেন। পাশাপাশি তাঁরা অন্যান্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছেন।
সাইদুর রহমান বলেন, এ অবস্থায় গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করার পাশাপাশি যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা জরুরি। কিন্তু সেটা না করে মোটরসাইকেল ব্যবহার উৎসাহিত করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে ২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ঝালকাঠি জেলায়।
রাজধানীতে ২৩টি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণ উঠে এসেছে। তার মধ্যে কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো, চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি অন্যতম।
প্রতিবেদনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, গণপরিবহন উন্নত করা, সড়ক-মহাসড়কে সড়ক বিভাজক নির্মাণ, বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়ানো অন্যতম।