চট্টগ্রামের খেলার মাঠগুলো বছরের বেশির ভাগ সময় ব্যবহৃত হচ্ছে মেলা কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে। মাঠের অভাবে খেলার দলগুলোর অনুশীলন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উঠতি খেলোয়াড়েরা সমস্যায় পড়ছেন।
চট্টগ্রামে দুটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের পাশাপাশি বেশ কিছু ছোট-বড় মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে আউটার স্টেডিয়াম, পলোগ্রাউন্ড মাঠ, লালদীঘি মাঠ, আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ ও প্যারেড ময়দান অন্যতম। এসব মাঠের মধ্যে প্রথম তিনটি বছরের বেশির ভাগ সময় মেলা এবং অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অপর দুটি মাঠ ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী।
চট্টগ্রামের ক্রিকেট কোচ তপন দত্ত বলেন, একসময় সব কটি মাঠেই বিভিন্ন দল প্র্যাকটিস করত। এ ছাড়া এগুলোতে খেলাও হতো। এখন মাঠের অভাবে ছেলেদের প্র্যাকটিস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি খেলোয়াড় তৈরিতে বড় বাধা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আউটার স্টেডিয়ামে এখন মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা চলছে। মাঠটির অর্ধেকের বেশি দখল করে প্রতিবছরের মতো এবারও চলছে সিটি করপোরেশনের এই মেলা। মেলার জন্য মাঠে অস্থায়ী মঞ্চ এবং টিন দিয়ে বিভিন্ন দোকান করা হয়েছে। মেলা উপলক্ষে গাছের চারা কিংবা অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে প্রতিদিন মাঠে ঢুকছে ট্রাক-পিকআপ। এতে বৃষ্টির পানিতে নরম হয়ে যাওয়া মাঠটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আউটার স্টেডিয়ামের এক পাশে ছোট খালি জায়গায় কিশোর ও তরুণেরা ফুটবল নিয়ে মেতে থাকে এখনো। বিভিন্ন গ্রুপ এখানে খেলার জন্য আসে। কিন্তু জায়গা না পেয়ে অনেকে ফিরে যায়। গতকাল সকালে এক পাশে ফুটবল নিয়ে মেতে থাকা কয়েকজন যুবক জানান, তাঁরা প্রতিদিনই আউটার স্টেডিয়ামে খেলতে আসেন। বিশ্বকাপ মৌসুম হওয়ায় এখন খেলার জন্য আরও বিভিন্ন গ্রুপ আসছে, কিন্তু মাঠে জায়গা পাচ্ছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষে বাগ্বিতণ্ডাও হয়ে থাকে।
বৃক্ষমেলার যেদিকে মঞ্চ করা হয়েছে, সেখানে ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য কয়েকটি নেট লাগানোর ব্যবস্থা রয়েছে। পাকা পিচও করা আছে। কিন্তু মেলার কারণে এখন তা-ও বন্ধ রয়েছে।
বৃক্ষমেলার আহ্বায়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ‘আমরা সিজেকেএস থেকে অনুমতি নিয়ে এখানে মাসব্যাপী মেলা করছি। খেলার জন্য কিছু অংশ খালি রেখেছি। সেখানে অনুশীলন করার জায়গা রয়েছে।’
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পাশের এই মাঠটির মালিকানা ছিল আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে। এখন এর মালিক চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)। প্রতিবছর বৃক্ষমেলা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, নিটল-টাটা গাড়ির মেলা, কারুপণ্য মেলা ইত্যাদি এখানে হয়ে থাকে।
পলোগ্রাউন্ড মাঠে বছরে দুটি শিল্পপণ্য মেলা হয়ে থাকে। মেলা উপলক্ষে এখানে ইটের স্থাপনাসহ নানা প্যাভিলিয়ন গড়ে তোলা হয়। মাঠের বেশির ভাগ অংশে বসানো হয় ইট। মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এখানে ইট সুরকি থেকে যায়।
লালদীঘি মাঠ সারা বছর ব্যস্ত থাকে রাজনৈতিক সভা সমাবেশে। এমন কোনো মাস থাকে না এখানে সভা সমাবেশ হয় না। এ ছাড়া প্রতিবছর বিজয় উৎসব, বইমেলা, জব্বারের বলীখেলা ও মেলা হয়ে থাকে এখানে। ফলে মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের এই মাঠটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারে না বললেই চলে।
লালদীঘি মাঠের মতো বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চবিদ্যালয় (বাওয়া) স্কুলের মাঠটিও বেশির ভাগ সময় মেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাজশাহী সিল্ক ও রাজশাহী আমের মেলা।
আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ একসময় অনেক বড় ছিল। কিন্তু নানা স্থাপনায় এখন এটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যা অংশ খালি আছে তাতে এখন নিয়মিত সবজি চাষ হয়। ফলে খেলার জন্য আর ব্যবহৃত হচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী এই মাঠ।
এ বিষয়ে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বেশ কিছু মাঠ এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। আউটার স্টেডিয়ামেও বছরের বিভিন্ন সময় মেলা থাকে। তার পরও আমরা মাঠটি সংস্কারের ব্যবস্থা করে খেলার আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’