প্রতিক্রিয়া: অধ্যাপক মিজানুর রহমান

মুশতাকের মৃত্যুর দায় রাষ্ট্রের, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান
অধ্যাপক মিজানুর রহমান

লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা। এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। মতপ্রকাশের কারণে একজন লেখককে এভাবে দিনের পর দিন আটকে রাখা এবং একপর্যায়ে তাঁর মৃত্যুর দায় রাষ্ট্র, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

তা ছাড়া আমি মনে করি, বিচার বিভাগের আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। লেখক মুশতাকের ছয়বার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিচার বিভাগের আরও মানবিক ও মানবাধিকারের বিষয়টি দেখা দরকার ছিল।

একজন ব্যক্তি একটা কিছু লিখলেই তাঁকে এভাবে মাসের পর মাস কারাগারে রাখতে হবে, তার পেছনে কী এমন কারণ থাকতে পারে! দেখা দরকার ছিল, মুশতাক কী লিখেছেন। তাতে আদৌ সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী কিছু ছিল কি না। সবচেয়ে বড় কথা, মামলা হতে পারে, তাই বলে জামিন পাওয়ার অধিকার তো তাঁর ছিল। তা ছাড়া এই মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ব্যক্তি জামিনে থাকলে রাষ্ট্রের কী এমন ক্ষতির কারণ হতো! বরং তিনি চিকিৎসা পেতেন।

লেখক মুশতাক আহমেদ।

বর্তমান যুগে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম কথা বলেন। সরকারের সমালোচনাও হতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। মুশতাক কিছু কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন। দেখতে হবে, সেখানে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত কি না।

ফেসবুক এক প্রকাশ্য মাধ্যম। এখানে লিখে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কাজে কীভাবে যুক্ত হয়েছেন, সেটাও পরিষ্কার হওয়া দরকার ছিল।

বিচার বিভাগের এই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরে আনলেই আটকে রাখতে হবে, এমনটা তো নয়। বিচার বিভাগকে ব্যক্তির মানবাধিকারের বিষয়টি দেখতে হবে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা আদৌ ঠিক কি না, সেটা বিবেচনায় আনতে হবে।