দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক ও সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের প্রধান মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরীর বদলিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে র্যাক। দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) মনে করে, এর মাধ্যমে দুদকের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে।
র্যাকের সভাপতি হায়দার আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আজ বুধবার এক বিবৃতিতে মুনীর চৌধুরীর বদলিতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ১৮ মার্চ জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরীকে বদলির আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
র্যাকের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশা জাগিয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের বেশ কিছু অভিযানও দুর্নীতিবিরোধী মানুষের কাছে ছিল ব্যাপক প্রশংসিত। এ ক্ষেত্রে দুদকের মহাপরিচালক এবং এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রধান মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর অভিযানগুলো ছিল ব্যাপক প্রশংসিত।
র্যাক নেতারা বলেন, ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার, সরকারের ভূমি উদ্ধার, প্রভাবশালীদের কাছ থেকে সরকারি গাড়ি উদ্ধারসহ বেশ কিছু কাজ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নিভৃতেই তিনি দুর্নীতিবিরোধী কাজ করছিলেন।
র্যাক বলছে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করতে মুনীর চৌধুরীকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর তাঁর নেতৃত্বাধীন কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি সারা দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থলে পরিণত হন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার একের পর এক অভিযানে ভেঙে যায় বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির সিন্ডিকেট। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের উদ্যোগে চালু হওয়া দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে অভিযোগ পাওয়ার পরই মুনীর চৌধুরী বিভিন্ন দপ্তরে হানা দিয়েছেন।
র্যাক কর্মকর্তারা বলেন, মুনির চৌধুরীর এনফোর্সমেন্ট টিম যখন সারা দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তাঁকে বদলি করা হলো জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে। জনশ্রুতি আছে, বড় দুর্নীতিবাজ বা রাঘববোয়ালরাই তাঁকে বদলির জন্য বেশ কিছুদিন ধরে সক্রিয় ছিল। তাঁর বদলির ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে দুর্নীতিবাজরা গোপনে মিষ্টি বিতরণ উৎসব করেছেন বলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে।
এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন র্যাকের দুই প্রধান। তাঁরা বলেন, ‘আমরা মনে করি, একজন সৎ কর্মকর্তার এমন বদলির কারণে দুদকের অন্য সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিকে পিছিয়ে দেবে। আমাদের প্রত্যাশা, মুনীর চৌধুরীকে দেশের স্বার্থেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য দুদকে ফিরিয়ে আনা হোক।’