দেখতে দেখতে নয় বছর পেরিয়ে ১০ বছরে। এই যাত্রায় কখনো আমরা সফল আবার কখনো ব্যর্থ। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আমাদের পথ চলা। ২০১১ সালের ২৮ মে সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি— মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন মুক্ত আসরকে নানাভাবে সাজাতে। তরুণদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য, শিল্পসাহিত্য ছড়িয়ে দিতে।
মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসংগ্রহের পাশাপাশি আমরা নিয়মিত–অনিয়মিতভাবে প্রকাশ করছি, দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ত্রৈমাসিক স্বপ্ন '৭১। এবারে ১০ম সংখ্যাটি ছিল 'মুক্তিযুদ্ধে রেডিও'। এই সংখ্যাটি দেশ–বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বেতার কী অসামান্য ভূমিকা ছিল তার বিস্তারিত আছে এই সংখ্যাতে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, আকাশবাণীসহ অন্যান্য রেডিও ভূমিকা, শিল্পী–কলাকৌশলীর অবদান, সংগ্রাম বিস্তারিতভাবে ৪৬৪ পৃষ্টায় এই পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। এখানে দেশের ও বিদেশের খ্যাতিমান লেখক, গবেষকগণ লিখেছেন।
আমরা ভাবতে পারিনি, আমাদের অনুষ্ঠান দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত হবে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তীও বলা চলে। প্রথমবারের মতো, গবেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকারের নেতৃত্বে লন্ডনে মুক্ত আসরের আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা হয় মুক্তিযুদ্ধে রেডিও নিয়ে। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
প্রতিবছরে মতো এবারও ছিল ১০০ শব্দের গল্প লেখা প্রতিযোগিতা ও সেরা লেখক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। তরুণেরা অনেক গল্প লিখে পাঠিয়েছেন। তৃতীয় খণ্ড প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। করোনার সময়টা অতিক্রম করলে আমরা দ্রুত তা প্রকাশ করব।
স্কুলভিত্তিক আয়োজন 'বাংলাদেশকে জানো', 'ভালো থাকুন', 'শুনি মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব কথা'র সঙ্গে আমরা বৃহৎ পরিসরে আয়োজন করছি, ইতিহাস অলিম্পিয়াডের। এবার আমরা অনলাইনেও ইতিহাস অলিম্পিয়াডের আয়োজনের প্রস্তুতি নিতেছি। প্রতিবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়নি। সেটাও আমরা দুই বছরেরটা এক সঙ্গে আয়োজন করব। সিরাজগঞ্জের দুটি জায়গা আমরা বন্যার্তের জন্য সহযোগিতা করতে পেরেছি। ত্রাণ দেওয়া ও চিকিৎসা সেবার আয়োজন করেছি সেখানে।
করোনার সংকট মুহুর্তে আমরা টুগেদার ইউ ক্যানের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করছি আর্ট ফর টুগেদারনেস ২০২০। শিল্পসাহিত্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তরুণদের অংশ গ্রহণ করার জন্য এমন উদ্যোগ। এ ছাড়া অনলাইনে আমরা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আয়োজন করতে শুরু করেছি, 'আমিই নজরুল'।
আমাদের পদচলায় নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন দেশ–বিদেশের অনেক মানুষ। তাঁদের কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। ভারতে সঞ্জিত দত্ত, স্বপন চক্রবর্তী, লন্ডনে কবি শামীম আজাদ, প্রিয়জিৎ দেবসরকার, লিপি হালদার, স্মৃতি আজাদ, আমেরিকায় জাকিয়া সুলতানা, কানাডায় উজ্জ্বল দাশসহ অনেকই।
মুক্ত আসরের প্রাণ শক্তি মুক্তবন্ধুরা। তাদের শক্তিতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপদেষ্টারা নিয়মিতভাবে আমাদের এই শক্তিতে শক্ত করার জন্য নানাভাবে সহযোগিতা, পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মেজর জেনারেল মাসুদুর রহমান, বীর প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা এমএসএ মনসুর আহমেদ, এএডএম সিদ্দিকুর রহমান খান, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ ড. এমরান জাহান, ড.একেএম শাহনাওয়াজ, কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, শিক্ষক রাশেদা নাসরীন, আবেদা সুলতানা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, চিকিৎসক আহমেদ হেলাল, সমাজসেবী ফারাহ দিবা আহমেদ, সরকারি কর্মকর্তা নুরুন আখতার, ফরিদা ইয়াসমিন, রাশেদুর রহমান, হোসাইন মোহাম্মদ জাকি, অনিক রাহীম, মাহমুদ ইকবাল, নিয়াজ চৌধুরী তুলি, শুভংকর কর্মকার, এনডি মিথুন, হিমেল হোসেন, সাইফুল্লাহ সাদেক, রুহুল আমিন, রাহিতুল ইসলাম, সাদিয়া রশ্নি সূচনাসহ প্রমুখ নানাভাবে কাজ ও সহযোগিতা করেন। তাঁদের অবদান কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি।
দিনরাত পরিশ্রম করে আমরা আজ যে ১০ম বছরে পা রাখছি এজন্য পিছনে অন্যতম কারিগর সাহাদাত পারভেজ, আশফাকুজ্জামান, সংগীতা আচার্য্য, মোহাম্মদ হাবিব, বায়েজিদ ভুঁইয়া, আইয়ূব সরকার, কৌশিক চাকমা, মাকদুসুউজ্জামান রবিন, আবু তাহের, আবদুর রাজ্জাক সরকার, উন্মে নূর কনা, শর্মি আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, আয়েশা জাহান, বেনী আমীন, সাহিনা মিতা, মনিরা পারভীন, শবনূর–এ–জান্নাত, জীবন রায়সহ প্রমূখ।
*লেখক:প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, মুক্ত আসর