মন্ত্রিপরিষদের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা আজ বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহবাগের মোড় অবরোধ করেন। তাঁরা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জড়ো হয়ে মিছিল করে সেখানে যান।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান করবেন। আগামী শনিবার বেলা তিনটায় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে নিয়ে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। এর আগ পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগে লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাবেন।
৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা ছাড়াও তাঁদের অন্য দাবিগুলো হলো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সুরক্ষা আইন, রাজাকারের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়া ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।
এসব দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ আতিকুর রহমান প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, আজ বাংলার মাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে। রাজাকারের প্রেতাত্মারা জেগে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা বাংলার মাটি থেকে হটিয়ে পাকিস্তান কায়েম করতে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছে হেরে যাওয়ার শামিল।
বুধবার বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের যে সুপারিশ করেছিল সরকারি কমিটি, তাতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না। এসব পদে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন হয়।
বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে নির্বাহী আদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি চালু করা হয়। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ পদে নিয়োগ করা হয় অগ্রাধিকার কোটায়। অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা (পরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, এখন নাতি-নাতনি) কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা কোটা। সর্বশেষ ২০১২ সালে বিদ্যমান অগ্রাধিকার কোটায় কাঙ্ক্ষিত যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই কোটা থেকে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়। এর বাইরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ আরও কিছু কোটা রয়েছে।