মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে জারি করা সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। বয়সসীমা নির্ধারণে পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ১৫টি রিট আবেদনে দেওয়া রুলের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় ঘোষণা করেন।
এ ছাড়াও রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৮-এর ২ এর ১১ ধারা অনুযায়ী বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার মাধ্যমে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার’ সংজ্ঞা নির্ধারণকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে বলা হয়, শহীদুল ইসলাম লালু একজন বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১০ বছর। তাঁর ছবি রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু বয়স নির্ধারণ করে দেওয়ায় তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ রয়ে গেছে। ফলে তাঁকে যে অবজ্ঞার শিকার হতে হয়েছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আদালত বলেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স সাড়ে ১২ বছর বয়স নির্ধারণ সংবিধানের প্রস্তাবনা ও সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে স্থান পাওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন এ বি এম আলতাফ হোসেন, ওমর সাদাত, তাঁর সঙ্গে সেলিনা আকতার ও আয়েশা আকতার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুখলেছুর রহমান ।
এর আগে ২০১৮ সালের বিভিন্ন সময় এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম সাড়ে ১২ বছর নির্ধারণ করে সংশোধিত পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—মর্মে রুল জারি করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের সচিব, সচিব, যুগ্ম সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থসচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছরের স্থলে সাড়ে ১২ বছর নির্ধারণ করা হয়। পরে এই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে একাধিক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১৬ সালে প্রথমে গেজেট প্রকাশ করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সে গেজেট সংশোধন করে বলা হয় ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।