মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা, দেশের জন্য আত্মত্যাগ ও আবেগের কথা মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠেই শুনল শিক্ষার্থীরা। ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের টানা নয় মাসের ঐতিহাসিক দিনগুলোর কথা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধারা। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া ও দেশ স্বাধীন করার কথা উঠে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে।
আজ রোববার সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরতলির দেববাড়ি এলাকার সেন্ট মার্থাস উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধারা। শিক্ষার্থীরা যেন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, এ জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আয়োজন করা হয় স্মৃতিচারণা নামের এই অনুষ্ঠানের।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ঐতিহাসিক দিনগুলোর বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধা সাইয়্যিদ মুজিবুর রহমান, বিরাজ সেন তরুণ ও কিরণ রোজারিও। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহর তরফদার, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেন্ট মার্থাস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিস্টার মেরী মাগ্রেট রিবেরু।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। এ কারণে বর্তমান প্রজন্মের একটা বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে ততটা জানে না। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মা-বাবাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে অনেকে যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল একটাই, দেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে রক্ষা করা, দেশকে মুক্ত করা।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে চোখের সামনে তাঁদের অনেক বন্ধু বান্ধব হারিয়েছেন। অনেকের লাশ পর্যন্ত কবর দিতে পারেননি। তখন নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পেয়েছেন স্বাধীন রাষ্ট্র।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানানোর জন্যই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা যখন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠ থেকে যুদ্ধের কথাগুলো শোনে, তখন সেটা তাদের মাথায় ভালোভাবে গেঁথে যায়। পাঠ্যপুস্তক পড়ে মুক্তিযুদ্ধ জানার চেয়ে এভাবে সরাসরি শুনলে তা বেশি কাজ করে।
আজ শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও উচ্চবিদ্যালয় ও মির্জাপুর উচ্চবিদ্যালয়েও মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একই ধরনের অনুষ্ঠান হয়েছে।