নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের জন্য হেনস্তার শিকার মেয়েটি এখনো মানসিকভাবে সুস্থির হতে পারেননি। তবে ঘটনার ছয় দিনের মাথায় সোমবার রাতে তিনি মাকে সবকিছু খুলে বলেছেন। মা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। মন খারাপ না করে সামনের দিকে তাকাতে বলেছেন। মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়েছেন ২২ বছরের মেয়েটি।
ওই তরুণী ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অনলাইনে রাস্তায় তৈরি করা বিভিন্ন খাবারের ভিডিও দেখে ১৭ মে এক বন্ধুকে নিয়ে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথে পরদিন ভোরে নরসিংদী রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষার সময় জিনস ও টপস পরার কারণে গালিগালাজ ও মারধরের শিকার হন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুও মারধরের শিকার হন। এক ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুরো দৃশ্যটি ভিডিও করেন এবং তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোশাকের জন্য তরুণীকে হেনস্তার এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
নরসিংদীর ওই ঘটনা এত দিন পরিবারের কাছে চেপে গিয়েছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। মেয়েটি প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধুরা তাঁকে মানসিকভাবে অনেক সহায়তা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই ওই দিনের ঘটনা ভুলতে পারছেন না। তাঁর সারা দিন কান্না পায়। মাকে বলতে না পারার জন্য কষ্ট আরও বেশি হচ্ছিল। মাকে বলবেন কি না, তা নিয়ে এ কয়েক দিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। সোমবার রাতে সাহস করে মাকে বলেন। মা প্রচণ্ড অবাক হয়েছেন, ভয়ও পেয়েছেন। তবে তিনি বকাঝকা করেননি।
ওই তরুণী বলেন, ‘মা বলেছেন, তোমার কোনো দোষ নেই। মন খারাপ কোরো না। তবে বাইরের সবাই ভালো মানুষ নয়, সেটা বুঝতে শেখো।’ তিনি মেয়ের পাশে আছেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন। তবে মেয়ে যেন আরও হেনস্তার শিকার না হন, এ কারণে মামলার বিষয়ে আগ্রহী নন। মেয়েটি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত পরিবারে তাঁর মা ও ছোট বোন বিষয়টি জানেন। বাবাকে জানানো হয়নি।
এদিকে ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গত শনিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় একটি মামলা করেছে। মামলার এজাহারে একজন পুরুষ ও একজন নারীর নাম আসামি হিসেবে দেওয়া হয়েছে এবং ৮–১০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আসামিদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই দিনের ঘটনা তুলে ধরেছিলেন ওই তরুণী। তিনি জানিয়েছিলেন, ১৮ মে ঢাকাগামী ছয়টার ট্রেন ধরতে তাঁর বন্ধুকে নিয়ে নরসিংদী রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় হঠাৎ এক নারী এসে জিনস–টপস পরার কারণে তাঁকে গালিগালাজ করে মুঠোফোনে ছবি তুলতে শুরু করেন। এরপরও আরও কয়েকজন এতে যোগ দিয়ে তাঁদের গালিগালাজ করে মারধর করতে থাকেন। ৯৯৯–এ ফোন দেওয়ার পর পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকাগামী ট্রেনে তুলে দেয়। তিনি ও তাঁর বন্ধু এখনো ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। লোকজন দেখলেও ভয় লাগছে। পোশাক নিয়ে আর কোনো মেয়েকে যেন হেনস্তার শিকার হতে না হয়, সে জন্য তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।