পাঠকনন্দিত গুপ্তচর চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বুধবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মাইমুর প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
কাজী আনোয়ার হোসেন একই সঙ্গে লেখক, অনুবাদক ও প্রকাশক। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে ‘মাসুদ রানা’ নামক গুপ্তচর চরিত্র সৃষ্টি করেন। এর কিছু আগে ‘কুয়াশা’ নামের আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তাঁর হাতেই জন্ম নিয়েছিল। ‘বিদ্যুৎ মিত্র’ ও ‘শামসুদ্দীন নওয়াব’ ছদ্মনামেও বই লিখেছেন তিনি।
গত বছরের অক্টোবরে কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। মাঝে পাঁচবার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তারপর ব্রেনস্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়।
বাংলাদেশে পেপারব্যাক বই প্রকাশের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল সেবা প্রকাশনী। এই প্রকাশনী পাঠকদের হাতে স্বল্পমূল্যে তুলে দিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের বিখ্যাত সব উপন্যাসের অনুবাদ।
১৯৬৬ সালে বিদ্যুৎ মিত্র ছদ্মনামে মাসুদ রানার প্রথম বই ‘ধ্বংস পাহাড়’ প্রকাশ করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। অভাবনীয় জনপ্রিয়তা পায় সে বই। এরপর তরুণ প্রজন্মের পাঠকদের কাছে আইকন হয়ে ওঠে মাসুদ রানা চরিত্র। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে সাড়ে চার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে এ সিরিজের।
কাজী আনোয়ার হোসেন গানও গাইতেন। ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পীও। যদিও পরে সে পেশা ছেড়ে দেন। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার পান। পেয়েছেন ‘সিনেমা’ পত্রিকা ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কারও।
কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই, ঢাকায়। তাঁর বাবা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মা সাজেদা খাতুন।
১৯৬৩ সালে কাজী আনোয়ার হোসেন প্রথমে সেগুনবাগিচায় প্রেসের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালের জুনে প্রকাশিত হয় সেগুনবাগান প্রকাশনীর প্রথম বই ‘কুয়াশা-১’। পরে প্রকাশনীর নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তাঁর মরদেহ সেগুনবাগিচায় সেবা প্রকাশনীর সামনে আনা হবে। বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে জানাজার পর তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হবে।