চার বছরের মধ্যে এই মৌসুমেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য তা–ই বলছে। শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (এআরআই) বলতে সর্দি–কাশি, গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কুইলাইটাস ও নিউমোনিয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে।
নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্যমতে, এ বছরের মার্চে গত বছরের মার্চের তুলনায় এআরআইতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩০। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮২০, ২০১৮ সালে ১০১০ এবং ২০১৭ সালে ১৪১ জন। একইভাবে দেখা যাচ্ছে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এআরআইতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯৫০, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪৬০। এর এক মাস আগে অর্থাৎ জানুয়ারিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৬৪১। গত বছরের জানুয়ারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৫২০।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের সাবেক বিভাগীয় প্রধান এইচ এ এম নাজমুল আহাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এআরআইয়ের অনেক রোগী পাচ্ছিলেন। রোগীরা সর্দি–কাশি, নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল।
আজ মঙ্গলবার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, জ্বর, সর্দি, কাশি মানেই কোভিড–১৯ নয়। তিনি আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কেন শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি, তা নিয়ে কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন, দূষণ ইত্যাদি কারণে মানুষ এ ধরনের রোগে ভোগে। যাঁদের অ্যাজমা বা সিওপিডি আছে, তাঁরা কষ্ট পান বেশি। আবার করোনাভাইরাসে সংক্রমণের একটা বিষয়ও রয়েছে। পরীক্ষার পরিধি বাড়ানো না হলে করোনাভাইরাসের কারণে এ ধরনের রোগ বাড়ছে কি না, নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। চিকিৎসকেরা বলেছেন, জ্বর–সর্দি–কাশি মানেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নয়। সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত পঞ্চম দিন থেকে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মোটামুটি ১০ দিনের পর থেকে আক্রান্তদের ক্ষুদ্র একটি অংশের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেটর লাগে। তাঁরা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত হতে নিষেধ করেছেন।
গত চার বছরের তুলনায় এ বছরই এআরআইতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এত বেশি কেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ রোগ ও রোগনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক শাহনীলা ফেরদৌস বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁদের জানুয়ারির দিকে অনেক রোগীর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন। এটা কেন, তা খুঁজে দেখতে সময় লাগবে।