সারা দেশে মার্চ মাসে দুটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় চারজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন, কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এমনকি দেশে ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা, সীমান্তে হত্যা, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা এবং গণপিটুনির মতো ঘটনা ক্রমে বেড়েছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে (মার্চ) এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার এমএসএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামালের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি আকারে পাঠানো হয়েছে।
১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের ১২টি জাতীয় দৈনিক ও ৮টি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এমএসএফ প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
এমএসএফের হিসাবে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি। এর মধ্যে র্যাবের হেফাজতে একজন ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের পর দুজনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে গেলে পুলিশের ভয়ে পালানো আসামিকে পরে মৃত অবস্থায় উদ্ধার, থানা অভ্যন্তরে অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মেরে গর্ভপাত ঘটানো এবং অপর এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ আছে।
কারা হেফাজতে ১০ মৃত্যু
সারা দেশে মার্চে কারা হেফাজতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন কয়েদি ও এক বিদেশি নারীসহ চারজন হাজতি রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। মার্চ মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুজন এবং ভারতীয় নাগরিকদের পিটুনিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় এক নারীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন দুজন বাংলাদেশি। সীমান্ত এলাকা থেকে ১৭ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতের বিজিবি ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।
এমএসএফ বলছে, মার্চ মাসে দেশে ধর্ষণ, হত্যা, পারিবারিক সহিংসতাসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বিগত মাসগুলোর তুলনায় বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময় দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৯৭টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৬৯টি, দলবদ্ধ ধর্ষণ ২৩টি, ধর্ষণ ও হত্যা তিনটি। ধর্ষণের শিকার ৬৯ জনের মধ্যে ৫৩ জন শিশু ও কিশোরী। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ কিশোরী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৪টি, যৌন হয়রানি ২৪টি ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। এ সময়ে ৩৬ জন শিশু ও কিশোরীসহ মোট ৯৬ জন নারী আত্মহত্যা করেন, যা গত মাসের তুলনায় ২৯ জন বেশি।
মার্চ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছয়টি মামলায় দুই আইনজীবী, এক সাংবাদিক, একজন বিরোধী দলের নেতার ভাই ও একজন প্রবাসীসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এসব মামলার মধ্যে চারটি হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে কথিত মানহানিকর কটূক্তির অপরাধে, একটি মামলা হয়েছে মাহফিলে দাওয়াত না দিয়ে নাম প্রচার করায়, গালাগাল নিয়ে একটি মামলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য একটি মামলা হয়েছে।
এমএসএফ জানায়, গত মাসে ৩৫ সাংবাদিক নানাভাবে হুমকি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাপ্রাপ্ত ও আহত হয়েছেন ১০ সাংবাদিক। নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন ১৫ জন সাংবাদিক। পেশাগত দায়িত্ব পালন করায় চার সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আক্রমণের শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক। এ ছাড়া পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষমতাসীন সরকার দলের নেতা-কর্মী, পুলিশ, স্থানীয় মেয়র ও চেয়ারম্যানের দ্বারা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মার্চ মাসে অন্যতম একটি উদ্বেগজনক বিষয় ছিল গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। এসব ঘটনায় ৮ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। চুরি বা ডাকাতি সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। এমএসএফ মনে করে, প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে এসব গণপিটুনির ঘটনা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।