ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘাত

মারা গেলেন আরও দুজন

সর্বশেষ মারা যাওয়া দুজনের বাড়ি যশোরে। তিন দফার নির্বাচন ঘিরে এ পর্যন্ত ৩৭ জনের প্রাণহানি।

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে গতকাল শনিবার যশোরের চৌগাছায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এদিকে জেলার শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউপি নির্বাচনের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে তৃতীয় দফার নির্বাচন ঘিরে সংঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। আর দ্বিতীয় দফার নির্বাচন ঘিরে সংঘাতে প্রাণ হারালেন ৩০ জন। প্রথম দফার নির্বাচনে মারা গেছেন ৫ জন।

গতকাল চৌগাছা উপজেলার হাজিপুর গ্রামে শওকত আলী নামের এক যুবক মারা যান। তিনি উপজেলার হাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় নির্মাণশ্রমিক।

১১ নভেম্বর চৌগাছা উপজেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হাকিমপুর ইউনিয়নে সাহিদা বেগম তালগাছ প্রতীক নিয়ে সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে নির্বাচন করেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পলি পারভীন হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তবে তাঁরা দুজনই নির্বাচনে হেরে যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল স্থানীয় মো. সেলিমের বাড়িতে ভবন নির্মাণের কাজ করতে যান সাহিদা বেগমের দেবর শওকত আলী। সেখানে সাহিদার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী পলি পারভীনের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সাহিদা বেগম বলেন, তাঁর দেবরকে উদ্দেশ করে গালাগাল করেন পলি পারভীন। এর প্রতিবাদ করলে পলি তাঁর দেবরকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়ে মারেন। এতে তাঁর দেবর মারা যান।

পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে পুলিশ পলি পারভীন (৪০) ও তাঁর ছেলে ইমরান হোসেন খানকে (২২) আটক করেছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে পলি পারভীনের স্বামী মফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে পলি পারভিন ও শওকতের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শওকত অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ যশোর জেনারেল
হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।

শার্শার বাগআঁচড়া ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় আহত মোস্তাফিজুর রহমানের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ লোকজন গতকাল সকাল সাতটার দিকে বাগআঁচড়া বাজারে অবস্থান নিয়ে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বাগআঁচড়া ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আবদুল খালেকের বাগআঁচড়া নির্বাচনী কার্যালয়ের পাশে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা মহড়া দিচ্ছিলেন। এ সময় তাঁদের ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস কবির বকুলের কর্মী-সমর্থকেরা। এতে খালেকের সমর্থক আবু সাঈদ গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে আবু সাঈদের বাবা আবদুল খালেক ওরফে ধাবক ও ভাই মোস্তাফিজুর রহমান এগিয়ে যান। পরে তাঁদেরও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটানো হয় ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আবদুল খালেক ও মোস্তাফিজুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল মোস্তাফিজুর সেখানে মারা যান।

আবদুল খালেকের ছেলে আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা বিদ্রোহী প্রার্থী খালেকের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করছি বলে ইলিয়াস কবিরের ক্ষোভ আছে।’

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস কবির বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। মূলত ধাবক পরিবারের লোকজন প্রতিপক্ষের চেয়ারম্যান প্রার্থী খালেকের পক্ষ নিয়ে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আমার কর্মী সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আরিনা বেগম আহত হন। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হতে পারেন।’

শার্শা থানার ওসি বদরুল আলম খান বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল খালেকের সমর্থক মোস্তাফিজুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন। এই খবর এলাকায় পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ লোকজন বাগআঁচড়া বাজারে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

পাথরঘাটায় প্রার্থীর সমর্থককে মারধরের অভিযোগ

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. ছগির আলমের কর্মী কামাল হোসেনকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহণ হবে।

মো. ছগির আলম বলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাহারুল সিকদার ও তাঁর ছেলে বাবু সিকদারের বিরুদ্ধে গতকাল সকালে তিনি পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ খবর পেয়ে তাঁর সমর্থক কামাল হোসেনকে তুলে নিয়ে টেংড়া বাজার এলাকায় মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

জাহারুল সিকদার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।