কবরী রোড। চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি রাস্তার নাম। ৪৭ বছর ধরে মুখে মুখে চলে আসছিল নামটি। কিন্তু ‘কবরী রোড’ নামের কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না। মানে নামটি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নয়, যদিও বাংলা সিনেমার মিষ্টি মেয়ে সারাহ বেগম কবরীর নামেই রাস্তাটির নাম।
২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘চুয়াডাঙ্গার সংস্কৃতিচর্চা ও কবরী রোডের গল্প’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন পর্যন্ত কবরী রোডকে নিয়ে তা-ই ছিল পূর্ণাঙ্গ কোনো প্রতিবেদন। অভিনেত্রী কবরীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। উঠে আসে নানা তথ্য। সংশ্লিষ্ট সবার স্মৃতিতে নাড়া দিয়েছিল প্রতিবেদনটি।
তখন প্রথম আলোর প্রতিবেদককে কবরী বলেছিলেন, তিনি এই সড়ক দেখতে একবার চুয়াডাঙ্গায় যেতে চান। কিন্তু মুশকিল হলো, তখন পর্যন্ত সরকারিভাবে রাস্তাটির নামের স্বীকৃতি ছিল না। এ অবস্থায় প্রথম আলোর প্রতিবেদনটির লেখক শাহেদ মুহাম্মদ আলী চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরীকে টেলিফোন করে প্রশাসনিকভাবে রাস্তাটির নামকরণের অনুরোধ জানান। এর সূত্র ধরে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে পৌর পরিষদের সভায় কবরী রোড নামের প্রশাসনিক স্বীকৃতির প্রস্তাব করা হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পৌরসভা কবরী রোডকে প্রশাসনিক স্বীকৃতি দেয়।
সে সময় মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘অভিনেত্রী কবরীর নামে রাস্তাটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পারা আমাদের জন্য সম্মানের বিষয়। এই মহানায়িকার চুয়াডাঙ্গায় আসার ইচ্ছাকে স্বাগত জানাই।’
কবরী রোড নামের প্রশাসনিক স্বীকৃতি মিললেও সময় করে শেষ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় আসা হলো না কবরীর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় গত শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক বেবী ইসলামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। ১৯৬৯ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘কখগঘঙ’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল এই চুয়াডাঙ্গায়, যার মূল চিত্রগ্রাহক ছিলেন বেবী ইসলাম এবং সহকারী চিত্রগ্রাহক মোরশেদ আহমেদ ওরফে তোকা মিয়া। কাহিনির প্রয়োজনে সিনেমাটির বড় একটি অংশ শুটিং হয়েছিল এই মোরশেদ আহমেদের চুয়াডাঙ্গা শহরের বাড়িতে। বেবী ইসলাম ও মোরশেদ মামাতো-ফুপাতো ভাই। এই বাড়িতে এক মাস থেকে ছবির কাজ শেষ করেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এই বাড়ির সামনের রাস্তাটিই পরে কবরী রোড নাম পেয়ে যায় মানুষের মুখে মুখে।
‘কখগঘঙ’ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সারাহ বেগম কবরী, রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন, রহিমা খালা, বেবী ইসলামের স্ত্রী তন্দ্রা ইসলাম প্রমুখ। সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদেরও উপস্থিতি ছিল এই ছবিতে। কবরী রোড প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তন্দ্রা ইসলাম (২০১৬ সালে) প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘যখন চুয়াডাঙ্গাতে “কখগঘঙ” সিনেমার শুটিং হয়, তখন কবরী খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সবাই দেখতে আসত। এসে বলত, কবরী কোথায় থাকে? লোকজন দেখিয়ে দিত, ওই যে ওই বাড়িতে।
রিকশাওয়ালারা উৎসুক লোকজনকে নিয়ে আসত। শুটিংয়ের এক মাসে মুখে মুখে কীভাবে যেন ছড়িয়ে পড়ে কবরী রোড নামটি।’
যে বাড়িতে ‘কখগঘঙ’ সিনেমার শুটিং হয়েছে, এর মালিক সপরিবার ঢাকায় থাকেন। বাড়ির একটি অংশে ব্যবসায়ী আখের আলী স্ত্রী, দুই সন্তানসহ বসবাস করেন। অপর অংশে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেস করে থাকেন। শহরে এটি ‘কবরী মেস’ নামে পরিচিত।