চিকিৎসকেরা বলছেন, লোকলজ্জার ভয় ঝেড়ে ফেলে প্রত্যেককে তাঁর নিজের মানসিক অবস্থা যাচাই করা প্রয়োজন।
করোনাকালের শুরু থেকেই অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়া বা অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ভীত হয়ে উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় ভোগা মানুষদের কথা বহুবার আলোচনা হয়েছে। নানান শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে এ বিষয়ে গবেষণাও হয়েছে বিস্তর। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন নতুন গবেষণা বলছে, মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাসা বাঁধছে নতুনভাবে। ঘুণ পোকার মতো তা ক্ষয় ধরাচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যে। এই বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থার বড় আঘাত পড়েছে বাংলাদেশেও। এক গবেষণা বলছে, করোনাকালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় বাংলাদেশ শীর্ষে। খোদ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরিপও বলছে, করোনা-সম্পর্কিত উদ্বেগজনিত অসুস্থতার হার সাধারণ উদ্বেগজনিত অসুস্থতার হারের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। হাসপাতাল ঘুরে এ চিত্রের বাস্তবতা পাওয়া গেছে।
২৮ বছরের ব্যক্তিটি দুই বছর আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে মাস্টার্স করেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও নেন। ওই চাকরির স্থায়িত্ব ছিল কয়েক মাস। এক বছর আগে হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যান তিনি। এতই বিমর্ষ থাকতেন যে একসময় তাঁর খাওয়াদাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় গত ২৯ ডিসেম্বর তাঁকে রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করান মা-বাবা। গত ১৯ জানুয়ারি হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ওই ব্যক্তির মা-বাবার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার গুরুতর ধরন সিজোফ্রেনিয়া ও স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে ভোগা রোগীর সংখ্যা বেশি, ২৭ শতাংশ। বাইপোলার রোগী ২৩ শতাংশ।
হাসপাতালে ভর্তি ওই অবিবাহিত ব্যক্তির চাকরি করোনাকালে চলে গেছে, নাকি তিনি নিজে ছেড়ে দিয়েছেন—জানতে চাইলেও তা স্পষ্ট করেননি তাঁর বাবা। তবে এটা জানিয়েছেন যে অসুস্থতা যখন দেখা দেয়, তখন ছেলের চাকরি ছিল না। ছেলের অবস্থা দেখে তিনি নিজেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ছোটখাটো একটি ব্যবসা করেন। সেটিতে এক বছর ধরে মনোযোগ দিতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ছেলের চিকিৎসা করছেন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে। বাবা জানান, তাঁরা কুমিল্লায় থাকেন। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলেটি বড়। চিকিৎসকেরা বলছেন, বিষণ্নতাজনিত গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিয়েছে তাঁর ছেলের। ২১ দিনের চিকিৎসায় ছেলে কিছুটা খাওয়াদাওয়া শুরু করেছেন। এখন তাঁদের ধরে ধরে হাঁটতে পারেন। মা-বাবা কিছু জিজ্ঞেস করলে টুকটাক জবাব দিলেও অন্য কারও কথায় সাড়া দেন না।
গত ১৯ জানুয়ারি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে পাঁচজন এবং ভর্তি থাকা তিন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। আটজনের মধ্যে তিনজন নারী।
বহির্বিভাগে ঘণ্টাখানেক পর্যবেক্ষণে দেখা গেল, কেউ এই প্রথম কোনো সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
১৯ জানুয়ারি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা যায়, একটি কম বয়সী ছেলেকে হাত-পা বেঁধে নিয়ে এসেছিলেন কয়েকজন। ছেলেটি সমানে চিৎকার করছিল।
করোনাকালে কী ধরনের অসুস্থতায় রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন, তা বুঝতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একটি জরিপ পরিচালনা করে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত জরিপটির শিরোনাম ‘প্যাটার্ন অব সাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার অ্যামং ফেসিং দ্য কনসিকোয়েন্সেস অব কোভিড-১৯ প্যানডেমিক অ্যান্ড অ্যাটেন্ডেড ইন আ টারশিয়ারি কেয়ার সাইকিয়াট্রিক হসপিটাল’ (করোনাকালে তৃতীয় ধাপের মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের মানসিক অসুস্থতার ধরন)। জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, রোগীদের ২৭ শতাংশ আর্থিক সংকট বা চাকরি হারানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। ৩৩ শতাংশের কোভিড-সম্পর্কিত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ ছিল, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত। উদ্বেগ ও বিষণ্নতাজনিত অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তির হার সমান, প্রায় ১১ শতাংশ। কোভিড-সম্পর্কিত উদ্বেগজনিত অসুস্থতার হার, কোভিড-সম্পর্কিত নয়, এমন উদ্বেগজনিত অসুস্থতার হারের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি, প্রায় ১৯ শতাংশ।
করোনাকালের আগে প্রকাশিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উদ্বেগজনিত অসুস্থতার হার প্রায় ৫ শতাংশ এবং বিষণ্নতাজনিত অসুস্থতার হার প্রায় ৭ শতাংশ।
কোভিডের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, সামাজিক আচরণ নষ্ট হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময়ে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো উপেক্ষিতও হচ্ছে। তাদের আচরণজনিত সমস্যা প্রকট হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বলে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা কম। তারা রাত জাগছে, মুঠোফোনে বেশি সময় কাটাচ্ছে, মা-বাবার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করছে। এই অবস্থা মোকাবিলা করতে হলে শিশু-কিশোরদের ধারণাজগতের বিকাশে মনোযোগ দিতে হবে।অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় জরিপের সঙ্গে ছোট পরিসরের সামনাসামনি জরিপ এবং অনলাইন জরিপ তুলনাযোগ্য না হলেও এসব তথ্য থেকে ধারণা করা যায় করোনা মানসিক স্বাস্থ্যে কী ভয়াবহ ছাপ ফেলছে।
করোনাকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার ওপর ‘প্রিভিলেন্স অব এনজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন ইন সাউথ এশিয়া ডিউরিং কোভিড-১৯: আ সিস্টেমেটিক রিভিউ অ্যান্ড মেটা-অ্যানালাইসিস’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। অংশগ্রহণকারীদের ৫২ শতাংশ উদ্বেগে ও ৪৮ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগেছে। আগে থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, এমন ব্যক্তিদের তথ্য এই গবেষণা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরিপটির জন্য ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ২৮৮ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। দেশে কোভিড-১৯ প্রথম শনাক্ত হওয়ার সময় ২০২০ সালের ৮ মার্চের পর যাঁদের প্রথমবারের মতো মানসিক সমস্যার উপসর্গ ধরা পড়েছে, প্রতিবেদনটির জন্য তাঁদেরই শুধু বাছাই করা হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৫ শতাংশের বয়স ২০ বছরের নিচে। অংশগ্রহণকারীদের ৪ শতাংশ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর স্বজনেরা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার গুরুতর ধরন সিজোফ্রেনিয়া ও স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে ভোগা রোগীর সংখ্যা বেশি, ২৭ শতাংশ। বাইপোলার রোগী ২৩ শতাংশ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালকের তত্ত্বাবধানে হওয়া জরিপ প্রতিবেদনের অন্যতম গবেষক হলেন হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসীর মারুফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় কমিউনিটি পর্যায়ে উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। তবে এই জরিপে দেখা গেছে, গুরুতর মানসিক অসুস্থতা দেখা দিলেই কেউ হাসপাতালে আসছেন। যাঁরা নিজেরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বা স্বজনেরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে বাইপোলার ও এ-সংক্রান্ত রোগ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২০২০ সালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে পুরুষ ২০ হাজার ৫৮২ জন এবং নারী ছিলেন ১৬ হাজার ৪৮০ জন।
১৯ জানুয়ারি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা যায়, একটি কম বয়সী ছেলেকে হাত-পা বেঁধে নিয়ে এসেছিলেন কয়েকজন। ছেলেটি সমানে চিৎকার করছিল। ছেলেটির মা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা রাজধানীর মিরপুরে থাকেন। ছেলে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ১৮ জানুয়ারি রাত থেকে ছেলে হঠাৎ মারমুখী হয়ে ওঠে। তাঁকে মারধর করে জামা ছিঁড়ে ফেলেছে। তিনি বাড়িতে কোনোরকমে রাতটা পার করে সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, তাঁর ছেলেকে এ রকম তিনি কখনো দেখেননি।
নরসিংদী থেকে এক মা এসেছিলেন মেয়েকে নিয়ে। মেয়ে কলেজে পড়ছে। পাশাপাশি একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করেন। মা প্রথম আলোকে বললেন, একটি ছেলের সঙ্গে তাঁর মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মেয়ের মানসিক স্থিতিশীলতা নেই।
হাসপাতালটির জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, মানসিক অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু-কিশোর এবং পারিবারিক মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কোভিডের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, সামাজিক আচরণ নষ্ট হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময়ে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো উপেক্ষিতও হচ্ছে। তাদের আচরণজনিত সমস্যা প্রকট হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বলে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা কম। তারা রাত জাগছে, মুঠোফোনে বেশি সময় কাটাচ্ছে, মা-বাবার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করছে। এই অবস্থা মোকাবিলা করতে হলে শিশু-কিশোরদের ধারণাজগতের বিকাশে মনোযোগ দিতে হবে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠের বয়স ছিল ১১ বছর এবং সবচেয়ে বেশি বয়সী ছিল ৭০ বছর। এ ছাড়া বেকারের সংখ্যা ২৩ শতাংশ, গৃহবধূ ২২ শতাংশ, দিনমজুর ৫ শতাংশ, চাকরিজীবী ১১ শতাংশ, ব্যবসায়ী ৭ শতাংশ এবং কৃষিকাজে যুক্ত ১ শতাংশ ব্যক্তি ছিলেন।
কোভিড-১৯-এর সময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার প্রাদুর্ভাবের ওপর ‘প্রিভিলেন্স অব এনজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন ইন সাউথ এশিয়া ডিউরিং কোভিড-১৯: আ সিস্টেমেটিক রিভিউ অ্যান্ড মেটা-অ্যানালাইসিস’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গত বছরের এপ্রিল মাসে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়েরের সেল প্রেসের হেলিয়ন সাময়িকীতে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ৩৫টি গবেষণা প্রতিবেদনের জন্য অনলাইন, টেলিফোন ও সামনাসামনি জরিপে অংশ নেওয়া ৪১ হাজার ৪০২ জনের মানসিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে অনেক কম প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন পায়নি গবেষক দল। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩১টি গবেষণায় ২৮ হাজার ৮৭৭ জনের মধ্যে উদ্বেগের হার ছিল ৪১ শতাংশ। ২৮টি গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩৭ হাজার ৪৩৭ জনের মধ্যে বিষণ্নতার মাত্রা ছিল ৩৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি গবেষণা ছিল ভারতের। তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। জরিপটিতে চাকরিজীবী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষার্থী, গৃহবধূ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, রোগী, বেকার লোকজন অংশ নিয়েছিলেন। উদ্বেগ ও বিষণ্নতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষে, যথাক্রমে ৫২ শতাংশ ও ৪৮ শতাংশ। প্রতিবেদনটিতে শ্রীলঙ্কার শুধু ২৫৭ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর জরিপের তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ওই নারীদের মধ্যে ১৮ শতাংশ উদ্বেগে এবং ২০ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছিলেন।
অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ২৬ থেকে ৪৩ বছরের মধ্যে ছিল। আর নারী অংশগ্রহণকারী ছিলেন ৪৫ শতাংশ। নারীদের ৪৬ শতাংশ এবং পুরুষদের ৪১ শতাংশ উদ্বেগে ভুগছিলেন।
নারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তায় বেশি ভোগার কারণ তুলে ধরে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কোভিডে ঘরবন্দী সময়টাতে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছিল। এটা নারীর মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা শক্তিশালী করার ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, জৈবিক ও মনঃসামাজিক এই দুটো কারণে মানসিক অসুখ দেখা দেয়। মানসিক সমস্যা ও মানসিক অসুস্থতা দুটো আলাদা বিষয়। বড় ধরনের মানসিক অসুস্থতা ৪০ বছরের বয়সের আগেই শুরু হয়। আর হতাশাজনিত অসুস্থতা বাড়ে বয়স বাড়লে। কোভিডে সমাজের বড় একটি অংশ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, লোকলজ্জার ভয় ঝেড়ে ফেলে প্রত্যেককে তাঁর নিজের মানসিক অবস্থা যাচাই করা প্রয়োজন। কেউ যদি অনুভব করেন যে তাঁর মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে সমস্যা হচ্ছে, কাজে মন দিতে পারছেন না, তাহলে অবশ্যই তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করা জরুরি। তাতেও সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।